এস এম রাফি ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫:০০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে পুলিশের হ্যান্ডকাপ পরিয়ে এক রাজমিস্ত্রিকে অপহরনের পর মুক্তিপন আদায়কালে পুলিশ সদস্যসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলশ। এসময় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত দুটি মোটর সাইকেল,হ্যান্ডকাপ ও স্প্রিংয়ের লাঠি উদ্ধার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার কোলাপাড়া ইউনিয়নের ফুলকুচি এলাকা থেকে মোঃ সুজন(২০)কে পুলিশ পরিচয়ে ৬ যুবক মিলে তুলে নেয়ার ৪ ঘন্টা পর পুলিশ অপহৃত রাজমিস্ত্রি সুজনকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল লিয়াকত হোসেন লিমন সহ উপজেলার উত্তর কামারগাঁও গ্রামের ফয়সাল খান,দামলা গ্রামের আরিফ হোসেন ও শাফিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর দিকে মান্দ্রা গ্রামের আরিফ মির্জা ও অজ্ঞাত এক আসামী পলাতক রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, রাজমিস্ত্রি সুজন ওই এলাকার হৃদয় মার্কেটের সামনে কোমলপানীয় পান করার সময় দুইটি মোটরসাইকেলে করে ৬ যুবক এসে তার কাছে মাদক আছে বলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাকে রাঢ়ীখাল এলাকার নির্জন স্থানে এবং বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে এনে বাড়ি থেকে মুক্তিপন এনে দিতে বলে। এসময় সুজন জানায়, ১৬ দিন আগে তার বাবা মারা গেছেন এবং মা পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান। এমন অবস্থায় সে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সুজনকে বেদম প্রহার করে। রাত ৯ টার দিকে অপহরনকারীরা সুজনের মায়ের কাছে ফোন দিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করে। সুজনের মা আনোয়ারা বেগম তাৎক্ষনিক ভাবে স্থানীয়দের পরামর্শে বিষয়টি শ্রীনগর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশের পরামর্শে আনোয়ারা বেগম টাকা নেওয়ার জন্য অপহরণকারীদেরকে সমষপুর এলাকায় তাদের বাড়ির সামনে আসতে বলেন। বেশ কয়েকবার তালবাহানা করে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে একটি এ্যাপাচি মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রোল ল ৪০-১৩৫৭) নিয়ে টাকা নিতে পাশ্ববর্তী ব্রাক্ষ্মন পাইকসা মসজিদের সামনে আসলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা শ্রীনগর থানা পুলিশ শ্রীনগর উপজেলার উত্তর কামারগাঁও গ্রামের আক্তার খানের ছেলে ফয়সাল খান(২৩),দামলা গ্রামের শেখ খলিলের ছেলে আরিফ হোসেন(২০),মাহি শেখের ছেলে মুজিবুর রহমান শাফিনকে আটক করে। পুলিশ তাদেরকে সাথে নিয়ে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ছনবাড়ি এলাকায় আসলে লিয়াকত হোসেন লিমন ও আরিফ মির্জা সহ অজ্ঞাত আরো একজন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সুজনের হাত থেকে হ্যান্ডকাপ খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। এর পরপরই শ্রীনগর থানা পুলিশ রাতভর অভিযান নামে। একপর্যায়ে দোহার ও শ্রীনগর থানা পুলিশ দোহার উপজেলার নিকরা গ্রামের নজরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় নজরুল ইসলামের বিল্ডিংয়ের একটি কক্ষ থেকে লিয়াকত হোসেন লিমনকে(২৫) গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিপি লেখা হ্যান্ড কাপ, স্প্রিংয়ের লাঠি ও অপহরনের কাজে ব্যবহৃত ইয়ামাহা এফজেড মোটরসাইকেল(ঢাকা মেট্রো ল ২৪-৯৯০৩) মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। লিমন ওই গ্রামের নজরুল ইসলামেরই ছেলে। সে মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ী থানার কুন্ডেরবাজার ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল হিসাবে কর্মরত বলে জানা গেছে। তার কনস্টেবল নম্বর ১১৬৩। অপর আসামী আরিফ মির্জা সহ আরো ১জন পলাতক রয়েছে।গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, লিমনের নেতৃত্বে তারা শ্রীনগর উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে জনসাধারণকে অটক ও অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করে আসছিল। পলাতক আরিফ মির্জা উপজেলার ভাগ্যকুল মান্দ্র গ্রামের দুলাল সর্দারের পুত্র।
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আব্দুল্লাহ আল তায়েবীর জানান, শ্রীনগর থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা রুজু হয়েছে। ভিকটিমকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। ৪ জনকে গ্রেফতার করে মুন্সীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। একজনের বিষয়ে কথা উঠেছে। সে পুলিশ সদস্য কিনা বা পুলিশ সদস্য হলে কোন ইউনিটে কর্মরত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।