আন্তর্জাতিক

শ্রীলঙ্কায় খাদ্য সংকট, অপুষ্টি প্রজন্ম হারানোর আশঙ্কা

  এস এম রাফি ৮ এপ্রিল ২০২৩ , ১০:৫৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর দেহিভালা-মাউন্ট লাভিনা। মূলত দেহিভালা ও মাউন্ট লেভিনা আলাদা দুটি শহর। কিন্তু দুটি শহর একেবারে পাশাপাশি হওয়ায় আর আলাদা নেই; একাকার হয়ে এক শহরে পরিণত হয়েছে বহু আগেই। এ জন্য একনামে ডাকা হয় দেহিভালা-মাউন্ট লেভিনা শহর। সংক্ষেপে দেহিভালা-লেভিনা।

এটি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত উপকূলীয় বাণিজ্যিক এলাকা। সাগরতীরের অত্যন্ত মনোরম এলাকা এ কারণে এটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। এখানকার লোকসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। পর্যটন ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে ভালো। কিন্তু ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের অত্যন্ত সমৃদ্ধ এলাকা দেহিভালা-লেভিনা এখন বলতে গেলে মরা মরা; এর চেহারা মলিন, নেই প্রাণচাঞ্চল্য, পর্যটকও আর আসেন না।

আয়-রোজগারের জন্য অনুকূল বিবেচিত এ শহরে এখন কাজ বলতে গেলে নেই। ব্যস্ত শ্রমিকরা অলস বসে থাকেন, যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তারা কাজ হারিয়ে বেকার। কর্মচঞ্চল বাণিজ্যিক এলাকা এখন ভুতুরে। আয়-রোজগার হারিয়ে মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অর্থ সংকট পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। সংসার চালাতে হিমশিম, জনজীবনে দিশাহারা অবস্থা। খাবারই জোটে না, সেখানে খাদ্যমান বা পুষ্টি দূরের কথা। অপুষ্টির কারণে স্বাস্থ্য সমস্যাও ক্রমান্বয়ে প্রকট হয়ে উঠছে। ওষুধ কেনার অর্থ জোগানও দুরূহ। সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে। শিশুদের অপুষ্টির হার বেড়েই চলেছে। এটি শুধু দেহিভালা-মাউন্ট লাভিনা এলাকার চিত্র তা নয়, শ্রীলঙ্কার সর্বত্র এই একই অবস্থা। দুর্গম ও দূরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি আরো বেশি ভয়াবহ।

একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে রিজার্ভের ঘাটতি। এর ফলে বাড়তে থাকে মুদ্রাস্ফীতি। দেশটির কাঁধে প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলারের ঋণভার। সময়মতো ঋণ শোধ করতে না পারায় নতুন করে অর্থ সংকুলানে ব্যর্থ হয় সরকার। দেশে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে থাকে। এই সংকট ডেকে আনে রাজনৈতিক সংকট। সরকারের পতন ঘটে ও নতুন সরকার গঠিত হয় কিন্তু এতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে ধাবিত হয়। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে চরম খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়।

২০১৯ সাল থেকেই কার্যত দেশটি অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে। ২০২০ সালে মুদ্রাস্ফীতি উচ্চপর্যায়ে উঠে যায়। ২০২১ সালে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি একেবারে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এরপর থেকে শ্রীলঙ্কা চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য সংকট তো আছেই; তার সঙ্গে রয়েছে জ্বালানি ঘাটতি আর ওষুধ ও বস্ত্র সংকট। জিনিসপত্র যা পাওয়া যায় তার দাম এতটাই বেশি যে তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। অন্যদিকে কাজ নেই, আয়-রোজগারের পথ খোলা নেই; স্থিতিশীল কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ নেই।

এ অবস্থায় মানুষ খাদ্যসাশ্রয়ী হতে শুরু করে। বাধ্য হয়েই খাবারের পরিমাণ এমনকি মানও কমিয়ে ফেলে। এ পরিস্থিতি যেমন বয়স্কদের ক্ষেত্রে, তেমনি শিশুদের ক্ষেত্রে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পুষ্টির অভাবে শিশুদের স্বাভাবিক বা সাধারণ বিকাশ হুমকির মুখে। শিশুদের মেধা ও মননের সঠিক বিকাশ না ঘটলে প্রজন্ম বুদ্ধি ঘাটতি নিয়েই বেড়ে উঠবে, যার প্রভাব পড়বে পরের দিনগুলোতে। ফলে দেশটিতে এই প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন শ্রীলঙ্কা চ্যাপ্টারের প্রধান জুলিয়ান চেল্লাপ্পা এরই মধ্যে সতর্ক করে বলেছেন, শিশুদের যে অপুষ্টি, তা ভয়াবহ। এ বিষয়টির দিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি প্রয়োজন। এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।