সম্পাদকীয়

সদ্যজাতীয়কৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম ও ৯ম গ্রেডভূক্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের নিরসন চাই

  মোঃ আমিনুল ইসলাম ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৬:৩৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৬৮৮টি (তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ-২০১৯) এর মধ্যে জাতীয়কৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৫৫টি । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদশে সরকারের পাঁচবারের সফল প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও দূরদর্শী চিন্তা থেকেই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়বিহীন প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনা সরকারের একটি যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। ইতোঃমধ্যেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সরকারিকরণের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে রাজস্বখাত থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন এবং অবশিষ্ট বিদ্যালয়গুলো এডহক নিয়োগের অপেক্ষায়। সদ্য জাতীয়কৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক আছেন যাদের চাকুরী প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং কেউ কেউ এডহক নিয়োগপ্রাপ্তির পরপরই অবসরে চলে গিয়েছেন যাদের সবাই বেসরকারী আমলে ৮ম/৯ম গ্রেডে বেতনভাতা পেতেন অথচ এডহক নিয়োগের সময় তাদের বেতনগ্রেড অবনমন করে সকল সহকারী শিক্ষকের একই বেতনগ্রেড (১০ম গ্রেড, ১৬০০০-৩৮৬৪০ টাকা) নির্ধারণ করা হয় যা অত্যন্ত দু:খজনক। যে সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীগণ ২০২১ সালের পূর্বে আত্মীকৃত হয়ে বেতনভাতা উত্তোলন করছেন তাদেরকে ১০ম গ্রেডে বেতনভাতা প্রদান করা হলেও পে-প্রোটেকশনের মাধ্যমে তাদের পে ফিক্সেশনে প্রারম্ভিক বেতন (আত্মীকরনের তারিখে) ২১৪৭০/- নির্ধারণ করে বেতনভাতা প্রদান করা হয়। অথচ ২০২২ সালের পরে যেসকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের এডহক নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে তাদের বেতনভাতা নির্ধারণে পে প্রোটেকশন বিবেচনা করা হয়নি। এতে করে ৮ম-৯ম গ্রেডভুক্ত শিক্ষকরা চরমভাবে বেতন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও অর্থ মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা আত্মীকরণ বিধিমালা-২০২৪ এর মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দেন। এমতাবস্থায় গত ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে আত্মীকরণ বিধিমালা-২০২৪ এর গেজেট প্রকাশিত হয় এবং বিধিমালার ১০ নম্বর বিধিতে (বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ) স্পষ্ট করে বলাহয় “এডহক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীগণ সংশ্লিষ্ট সরকারিকৃত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের তারিখ হইতে বিদ্যমান জাতীয় বেতনস্কেলের সংশ্লিষ্ট গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে স্ব স্ব পদের বেতন ভাতাদি প্রাপ্য হইবেন” এবং এই আত্মীকরণ বিধিমালাটি ১৫ মে ২০১১ খ্রিঃ তারিখ হইতে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। এই বিধিমালাটি জারির পর থেকে ৮ম-৯ম গ্রেডভুক্ত শিক্ষকগণ চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন, তাঁরা চরমভাবে আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পরেছেন এবং তাদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এছাড়াও যারা ইতিপূর্বে পে-প্রোটেকশনের মাধ্যমে বেতনভাতা গ্রহন করেছেন তাঁদেরকে এই বিধিমালার আলোকে অতিরিক্ত বেতনভাতা ফেরৎ প্রদানের জন্য উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে যা শিক্ষক সমাজকে চরমভাবে অপমানিত করার শামিল। যেখানে বিদ্যালয় সরকারিকরণের ঘোষনায় শিক্ষক সমাজ আশায় বুক বেঁধেছিল অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার অথচ সেই আশা আজ হতাশায় রূপান্তরিত হয়েছে। সরকারিকরণের পর যেখানে বেতন বাড়ার কথা সেখানে বেতন কমানো হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যমান জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম গ্রেডভুক্ত একজন শিক্ষকের বেতন-ভাতা সাকূল্যে ৩০৭৯৮/, ৯ম গ্রেডভুক্ত একজন শিক্ষকের বেতন-ভাতা সাকূল্যে ২৯৫৩৫/- এবং ১০ম গ্রেডভুক্ত একজন শিক্ষকের বেতন-ভাতা সাকূল্যে ২১৮৯৭/- সেখানে একজন সদ্য জাতীয়কৃত বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাকূল্যে বেতন ভাতা পাচ্ছেন ৩২১৩৮/- (শিক্ষাভাতা ১০০০ সহ)। এই বিধিমালার আলোকে ১০ম গ্রেডভুক্ত সদ্য যোগদানকরা একজন বেসরকারি শিক্ষক আর্থিকভাবে লাভবান হলেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ৮ম ও ৯ম গ্রেডের শিক্ষকগণ।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়বিহীন উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নোয়নে সরকারের সূদূর প্রসারী পরিকল্পনা এই বিশাল ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদেরকে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। তাই মানবতার মা, মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সমীপে আকুল আবেদন যতদ্রুত সম্ভব এই বেতন বৈষম্য নিরসনের পদক্ষেপ গ্রহর করে শিক্ষক সমাজের চরম আর্থিক অনিশ্চয়তা দূর করবেন।

মোঃ আমিনুল ইসলাম
সহকারী শিক্ষক
রৌমারী সি, জি, জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
রৌমারী, কুড়িগ্রাম।