চাকরি

সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কীম প্রত্যাহারের দাবিতে রাবিতে শিক্ষকদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি

  মারুফ হাসান,রাবি প্রতিনিধি: ৪ জুন ২০২৪ , ৩:৪৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ডাকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কীম প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষকবৃন্দ অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস রোড সংলগ্নে শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান উপস্থিত হয়ে সরকারের প্রত্যয় স্কীম প্রত্যাহারের দাবিতে মতামত দেন এবং অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।

সরকার ২০২৩ সালের ১৭ই আগস্ট সর্বজনীন পেনশন ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার প্রত্যয় স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা নিজ বেতন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর চাঁদা প্রদান করলে তিনি অবসর গমনের পর অর্থ্যাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন প্রাপ্য হবেন।
রাবি অধ্যাপক রাবেয়া বেগম বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং শিক্ষকরাই সেই মূল্যবান শিক্ষাপ্রদান করে একটি জাতিকে শিক্ষিত করে তোলেন। কাজেই শিক্ষকদের সাথে এমন বৈষম্য করা উচিত নয়। বিভিন্ন উন্নত দেশ যেমন আমেরিকা,ইংল্যান্ড, চীন ইত্যাদি দেশে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হয়। কারণ তারা একজন শিক্ষকের মূল্য জানেন।তাই বাংলাদেশকে যদি একটা উন্নত দেশে পরিণত করতে হয় তাহলে এখানেও শিক্ষকদের সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হবে এবং তাদের প্রতি সকল ধরনের বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। ভুলে যাবেন না ১৯৭১ সালে শিক্ষকরাই ছাত্রদেরকে অনুপ্রাণিত করেছিল তার দেশের জন্য লড়াই করতে। আজ সেই শিক্ষকদের প্রতি এমন ধরনের বৈষম্য আমি মেনে নিতে পারি না। প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অনেকদিন ধরেই এদেশকে সুষ্ঠভাবে শাসন করে আসছেন।আমি জানি তিনি এতটাও অমানুষ না যে তিনি শিক্ষকদের প্রতি এমন ধরনের বৈষম্য করতে পারেন।তাই আমার তার প্রতি একান্ত অনুরোধ যে তিনি যাতে শিক্ষকদের প্রতি সুবিচার করে

প্রাণরসায়নও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক সোহেল হাসান বলেন, আসলে যে প্রজ্ঞাপন টা জারি হয়েছে পেনশন এর বিষয়টি সর্বজনীন হলেও এখানে প্রজ্ঞাপনে ৩ শ্রেনীপেশার মানুষকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত সসস্ত্র বাহিনী, তৃতীয়ত বিচারক। বর্তমান যে শ্রেনীপেশার মানুষ শক্তিশালী সরকার যাদের উপর নির্ভরশীল তাদেরকে এর বাহিরে রাখা হয়েছে। যদি বিষয়টি সর্বজনীন হয়েই থাকে তাহলে এই ৩ শ্রেনির মানুষ দের বাহিরে রাখা হতো না,আমার মনে হয় কেউ না কেউ সরকার কে এই বিষয়ে প্রভাবিত করতেছে এবং তিনি আরও বলেন, জার্মানির চ্যান্সেলর এর কাছে তার কর্মকর্তারা একবার প্রশ্ন করেছিলেন শিক্ষকদের বেতন আমাদের চেয়ে বেশি কেন, উত্তরে তিনি বলেন যারা তোমাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন তোমরা কি তাদের থেকে বেশি বেতন আশা কর।সুতরাং শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় সেখানে শিক্ষকদের মর্যাদা ভূলন্ঠিত করা খুবই দুঃখজনক।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এ প্রত্যয় স্কিমে আমাদের কোন সুবিধা থাকবে না। আমরা প্রতিমাসে যে টাকা জমা করবো,পেনশনের সময় সে টাকাই আমাদের ফেরত দেওয়া হবে।আজকে আমরা এই জায়গা দাঁড়িয়েছি আমাদের জন্য না,তোমাদের সুরক্ষার জন্য যারা ভবিষ্যৎ এ এই পেশায় আসবে এবং যারা পরবর্তীতে বিভিন্ন পদে যোগদান করবে তাদের কথা ভেবে। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ ও দেশকে রক্ষার জন্য আজকের এই কর্মসূচী। যদি আমাদের এই দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া না হয় তাহলে আমরা আগামী ২৫,২৬ ও ২৭ জুন অর্ধ কর্ম বিরতিতে যাব। তারপরও যদি আমাদের আন্দোলন এর কোন সূরাহ না হয় তাহলে ৩০ জুন আমরা পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাব এবং এরপরও যদি এই ব্যপারে কোন সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে ১ জুলাই থেকে আমরা সকল ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করবো।

এসময় রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় শিক্ষক সমিতির সকল সদস্য বৃন্দসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।#