সদরুল আইন, স্টাফ রিপোর্টার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১০:৪৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
স্বতন্ত্র প্রার্থিদের জনপ্রিয়তার কাছে ক্রমশ কোনঠাঁসা হয়ে পড়ছে জোট ও আওয়ামী লীগের দুর্বল প্রার্থিরা। এবারের নির্বাচনে নৌকা ও জোটের অনেক প্রার্থিরই ভরাডুবি ঘটবে জনপ্রিয় স্বতন্ত্র প্রার্থিদের জনপ্রিয়তার দাপটে তার আলামত এখনই দৃশ্যমান।
এতদিন নৌকা পাওয়া মানেই নিশ্চিত বিজয় মনে করেছিল যেসব প্রার্থিরা এবারের নির্বাচনে ইতিমধ্যেই তাদের কপালে চিন্তার বলীরেখা পড়তে শুরু করেছে।কেন্দ্রিয় কতিপয় নেতা আ,লীগের স্বতন্ত্রদের বসিয়ে দিতে নানা তৎপরতা চালালেও প্রধানমন্ত্রীর কড়া মনোভাবের কারনে তা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
দলটির উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছেন যে, হয়ত শেষ পর্যন্ত কিছু কিছু আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থি ও অজনপ্রিয় স্বতন্ত্রদের বসিয়ে দেওয়া হতে পারে তবে তা গণহারে করা হবে না।
যারা সত্যিকার অর্থেই জনপ্রিয় তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হলে তাদেরকে স্বাগত জানাবে আ.লীগ।
এবারের নির্বাচনে কোন রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না।নির্বাচনে জিতে আসার দায়িত্ব প্রার্থির নিজের।জিতার প্রশ্নে কোন রকম সহায়তা করবে না দলটি।প্রশাসন থাকবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ।কোন কেন্দ্রে বা প্রচারনায় যদি নৌকার প্রার্থিও স্বতন্ত্রদের বিরুদ্ধে পেশিশক্তি প্রদর্শণ করে তবে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ তার মহাজোট এবং ১৪ দলের শরিকদেরকে আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছে।
১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৪ দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আজ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানেও আসন সমঝোতার বিষয়টি আলোচনা হবে। আওয়ামী লীগ শরিকদের কতগুলো আসন ছাড়বে তার দিকে তাকিয়ে আছে ১৪ দলের শরিকরা। এমনকি জাতীয় পার্টিও।
যে সমস্ত আসন ১৪ দলের শরিকদেরকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিবে, সেই সমস্ত আসনগুলোতে ১৪ দলের শরিকরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে এমনটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এখানে আওয়ামী লীগ পাঁচ থেকে ছয়টি আসন দিতে রাজি। তবে ১৪ দলের অন্যতম নেতা হাসানুল হক ইনু গতকাল আমির হোসেন আমুর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বলেছেন যে, তারা ২০টি আসন প্রত্যাশা করে।
তবে ২০টি আসনের বিষয়টিকে অতি বাড়াবাড়ি এবং অপ্রত্যাশিত চাওয়া হিসাবে মনে করছে আওয়ামী লীগ। তাদের কোন অবস্থাতেই এতগুলো আসন দেওয়া হবে না। এটা ১৪ দলের শরিকরাও জানেন।
তবে এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। ১৪ দল যে কটি আসন পাক না কেন, সেটার চেয়েও ১৪ দলের এখন বড় প্রত্যাশা জায়গা হল যে সমস্ত আসনে ১৪ দলের শরিকরা নৌকা প্রতীক পাবেন সেই সমস্ত আসনে যেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীরা না থাকে।
স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীরা থাকলে ১৪ শরিকদের যারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন, তাদের জয় অসম্ভব হয়ে যেতে পারে এবং তারা বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে পারেন।
একারণে তারা এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেন দরবার করছেন। অন্তত নৌকা প্রতীক নিয়ে যেখানে যেখানে তারা নির্বাচন করবেন সেখানে সেখানে যেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের যেকোনো মূল্যে বসিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়নি। একই অবস্থা জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও। জাতীয় পার্টি মনে করছে যে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যদি নৌকা প্রতীক থেকে বসে যান তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং তখন সমস্যা আরও বাড়বে।
তাদের কাছে মনে হচ্ছে যে, যদি শেষ পর্যন্ত একটি নির্বাচনী এলাকায় নৌকা প্রতীক না থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের যিনি বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন তার পক্ষে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে একটি জোয়ার উঠতে পারে।
এই অবস্থায় জাতীয় পার্টিতে যে কটি আসনই ছেড়ে দেওয়া হোক না কেন, প্রত্যেকেই আসনই বিপদসঙ্কুল হয়ে উঠতে পারে তাদের জন্য। আর এ কারণেই শরিকদের এখন সবচেয়ে বড় ভয়ের নাম স্বতন্ত্র প্রার্থী।
আর এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নির্বাচন থেকে কিভাবে বসিয়ে দেওয়া যায় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে লাগাম কিভাবে টেনে ধরা যায় সেটাই এখন জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিকদের প্রধান চাওয়া।
আর এ কারণেই ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির নেতারা আওয়ামী লীগের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে তাদের আতঙ্কের কথা বলেছেন।
এবার নির্বাচনে যে সমস্ত দলগুলো দুর্বল, যাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা অত্যন্ত কম এবং যারা এতদিন শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের কৃপায় মন্ত্রী, এমপি মন্ত্রী হয়েছেন, তাদের জন্য বড় আতঙ্কের কারণ হিসেবে এসেছে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, অনেক এলাকাতেই তারা আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি কিংবা ১৪ দলের শরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম এবং সেই চ্যালেঞ্জে তারা যে বিজয়ী হতে পারে সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।