শিক্ষা

স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে রুয়েটে স্বতঃস্ফূর্ত সম্মিলিত ইফতার আয়োজন

  রুয়েট প্রতিনিধি ২ মার্চ ২০২৫ , ১১:১৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

আজ রবিবার (০২ মার্চ) রুয়েট শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মিলিত ইফতার। এই আয়োজন শুধুমাত্র ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং এটি হয়ে উঠেছিল এক অনন্য মিলনমেলা—যেখানে সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব এবং ঐক্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

পবিত্র রমজান শুধু ধর্মীয় অনুশীলনের মাস নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও সামাজিক বন্ধনের অন্যতম প্রতীক। ইফতার বাঙালি ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলেমিশে খাওয়ার আনন্দে পরিণত হয়। সেই ঐতিহ্য ধরে রেখে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা ২০২৫ সালের প্রথম রমজানে একত্রিত হয়ে আয়োজন করল “ইফতার সন্ধ্যা”।

গত বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) স্বৈরাচারী প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত ইফতার আয়োজন নিষিদ্ধ করেছিল। সেই ঘটনার প্রতিবাদে রুয়েটের শিক্ষার্থীরাও একত্রিত হয়ে প্রথম রমজানে ইফতার করেছিল, যদিও তখন নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ছাত্রলীগের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সেই সময় শিক্ষার্থীরা সাহসী অবস্থান নিয়েছিল। তবে, এবারের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এবার কোনো প্রকার বাধাবিঘ্ন ছাড়াই শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে এই আয়োজন সম্পন্ন করতে পেরেছে।

সন্ধ্যার আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে প্রস্তুতিতে—কেউ পানি আনছে, কেউ শরবত তৈরি করছে, আবার কেউ নিজের ইফতার ভাগ করে নিচ্ছে। একত্রিত এই আয়োজন পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত উৎসবে, যেখানে প্রতিবাদ ও ঐক্য একসূত্রে গাঁথা। গ্রাম থেকে শহর, দরিদ্র থেকে বিত্তবান—সব শ্রেণির মানুষের জন্য ইফতার যেমন ধর্মীয় তাত্পর্য বহন করে, তেমনি এটি এক অনন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনের ক্ষেত্রও তৈরি করে।

রমজানের প্রথম দিনেই রুয়েট শিক্ষার্থীদের এই একতাবদ্ধ আয়োজন প্রমাণ করে যে ইফতার শুধু একটি খাবারের সময় নয়, এটি প্রতিরোধের প্রতীক, এটি বন্ধন ও ঐক্যের বহিঃপ্রকাশ। স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে এবার শিক্ষার্থীদের কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি, যা এই আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। রুয়েটিয়ানরা চায়, প্রতিবাদের এই ঐতিহ্য আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকুক।