এস এম রাফি ৫ আগস্ট ২০২৩ , ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
হুমকির মুখে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে নির্মিত কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ। পূর্ণিমার জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে বিশ্বের বৃহত্তম এ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাঁচটি পয়েন্টে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে সড়কটির কমপক্ষে ১৫ স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মেরিন ড্রাইভ রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এ সড়কটির অন্তত পাঁচটি নতুন স্থানে ভাঙতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে সড়কটির কমপক্ষে ১৫ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে হাদুরছড়া বিজিবি ক্যাম্পসংলগ্ন শ্মশান পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ওই এলাকার পশ্চিম মুন্ডার ডেইলসংলগ্ন নতুন করে ভেঙে গেছে ১৫০ মিটারের মতো। বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় ৬০ মিটারের মতো সড়ক ভেঙে পড়ে।
ওই এলাকায় দেখা যায়, সমুদ্রে জোয়ারের সময় প্রবল ঢেউ এসে আঘাত হানছে সড়কে। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি বিশেষ ইউনিট জিওব্যাগ দিয়ে সড়ক রক্ষায় কাজ করছে। আশপাশে বাহারছড়া, হাদুরছড়া, দক্ষিণ মুন্ডার ডেইল এলাকায় অন্তত ১৫ জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব জায়গার কয়েকশ’ ঝাউগাছ উপড়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, সাগর উত্তাল। তার সঙ্গে বিশাল বিশাল ঢেউয়ে আঘাত করছে মেরিন ড্রাইভে। যার কারণে মেরিন ড্রাইভের ভাঙন এখনও অব্যাহত রয়েছে। নতুন নতুন স্পটে ভাঙন ধরছে।
আজিজ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, গত তিন দিন ধরে মেরিন ড্রাইভ ভাঙছে। বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী ভাঙন রোধে জিওব্যাগও দিয়েছে। কিন্তু আগে থেকেই যদি জিওব্যাগ ফেলা হতো তাহলে এভাবে মেরিন ড্রাইভে ভাঙন হতো না।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সড়কের পূর্বপাশে প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি জমি কিনেছেন। সে জমি ভরাট করতে সড়কের পাশের সৈকত থেকে অবাধে বালু তুলছে একটা শ্রেণি। এতে সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সেলিম বলেন, ভাঙনের কারণে স্থানীয় প্রায় দুই হাজার পরিবারের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। একই সঙ্গে সড়কের পূর্বের গ্রামের বসতঘর, জমিসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
তিনি বলেন, বড় ভাঙন রোধে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। ছোট ছোট ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা জরুরি।
পর্যটন ব্যবসায়ী সরওয়ার আলম বলেন, কক্সবাজারের পর্যটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মেরিন ড্রাইভ। তাই এই সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো দ্রুত মেরামতের পাশাপাশি স্থায়ী প্রতিরক্ষার দাবি জানান তিনি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেছে। এতে মেরিন ড্রাইভের সাবরাং বাহারছড়া ঘাট, মুন্ডার ডেইল, হাদুরছড়া ও পশ্চিম মুন্ডার ডেইল এলাকার বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর কাজ করছে।’
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের নয়নাভিরাম নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকনে প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে এর মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়ানো পাহাড় শ্রেণি। এই অবস্থায় কক্সবাজার তথা সারা দেশের পর্যটন শিল্পের দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরের সৈকত ঘেঁষে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। সড়কটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সামরিক ও অর্থনৈতিক কৌশলগত ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ সব বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৭ সালের ৬ মে দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভটির উদ্বোধন করা হয়। সড়কটি এই উপকূলের জনগণকে সাগরের জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা, লবণাক্ততার প্রভাব হ্রাস, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং বঙ্গোপসাগরের মৎস্য আহরণ ও মৎস্য শিল্পের উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে।
সূত্র: সময়টিভি অনলাইন