জাতীয়

২৬ আসন পেতে পারে জাতীয় পার্টি

  অনলাইন ডেস্ক ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১২:০৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় দলের সভাপতির ধানম-ির কার্যালয়ে প্রথম বৈঠক হয়। এরপর জাপার দাবিকৃত প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণভবনে যান। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সমঝোতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগের জাপার ২৩ এমপির ৯০ ভাগই টিকে গেছে সর্বশেষ বৈঠকে। শেষ পর্যন্ত আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। যতদূর জানা গেছে, ২৬ আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। যদিও জাপার পক্ষ থেকে ৭০টি আসনের তালিকা দিয়েছিল। তবে জাপা প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে হবে।

জাপা তিনশ’ আসনে প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। এই ২৬টি আসনে ছাড় পাবে এ ভাবেই তারা নির্বাচন করবে। কোনো পক্ষই এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। সবার মধ্যে একটি লুকোচুরির ভাব দেখা যাচ্ছে। শনিবার রাতের বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সবার উপস্থিতিতে জাপার মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন। তারা দ্রুত আসন সমঝোতা করার তাগিদ দেন। জবাবে বিষয়টি দ্রুত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
এর আগে চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা এখনো পুরোপুরি হয়নি। আরও বৈঠক হবে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিসহ নানা বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক চলছে। নির্বাচনের আগে পযন্ত আরও বৈঠক হবে। আলোচনার টেবিলে কতটি আসন এসেছে? এ বিষয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের চিঠি লিখব, এটা কি বাবা-মাকে প্রথমে বলা যায়? আত্মীয়স্বজনকে বলা যায়? বলা যায় না। পরে যখন হয়ে যায়, তখন বলা যায়।’ প্রেম এমন সম্পর্ক; প্রেম হয়, বিরহ হয়। আবার গভীর হয়, আবার বিরহ হয়। প্রেমের তো শেষ পরিণতি বিয়ে।’ তবে প্রেমে সবাই নায়ক হতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট কিংবা মহাজোট করার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। আমরা মনে করছি ভোটে নীরব বিপ্লব হবে।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, ছাড় দেওয়া ২৬টি আসন ছাড়াও তারা আরও ৯টি আসন দাবি করছে। সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ আর সর্বোচ্চ দুটি আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে পারে। তবে এই আসনগুলো প্রকাশ করা নাও হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা-৬ ও ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় পার্টি দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে। আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্রদের প্রত্যাহার করতে পারে আওয়ামী লীগ। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা ৬ আসনের প্রার্থী। অন্যদিকে ঢাকা ১৭ আসনে জাপার প্রার্থী দলটির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম।
জাপা সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পার্টির দেওয়া আসন তালিকাতে ফেনী-৩, বরিশাল-৩, ঢাকা-১৭ ও ১৮ আসন, রংপুর, খুলনা, কুমিল্লা, সিলেটের একটি আসনসহ প্রায় ১৫টি আসন ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। এ সময় জাতীয় পার্টির নেতারাও কোনো ধরনের আসন ছাড় দিতে নারাজ। একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, যাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে তারা হলেন রংপুর-৩ জিএম কাদের, গাইবান্ধা-১ শামীম হায়দার পাটোয়ারি, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, পটুয়াখালী-১ জাপার কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৩ মো. মুজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-৫ এ কে এম সেলিম ওসমান, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্না, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান, চট্টগ্রাম-৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বগুড়া-৩ মো. নুুরুল ইসলাম তালুকদার, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশিদ, নীলফামারী-৪ আহসান আদেলুর রহমান, ঠাকুরগাঁও-৩ হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-২ পনির উদ্দিন আহমেদ, লালমনিরহাট-৩ আসনে জাহিদ হাসান, রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসিফ শাহরিয়ার, রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আনিসুল ইসলাম মন্ডল, কুড়িগ্রাম-১ একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, দিনাজপুর-৪ আসনে মোনাজাত চৌধুরী, পিরোজপুর-৩ মাশরেকুল আলম রবি।

এ ছাড়া সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন, সাতক্ষীরা-১ আসনে সৈয়দ দিদার বখত ও খুলনা-৬ আসনে শফিকুল ইসলাম মধু, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, জামালপুর-২ মোস্তফা আল মাহমুদ ও শেরপুর-১ মাহমুদুল হক মনির নাম। ফেনী-৩ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ অথবা ৩ আসনে অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার আসন।

সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ নৌকা ছেড়ে দিলেও একই আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থেকে গেলে ওই আসন তাদের জন্য নিরাপদ নয়। ফলে সমঝোতা হওয়া আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও যেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, সেটিই চাইছে জাপা। আওয়ামী লীগ অবশ্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে ‘নাক গলানো’র কোনো ইচ্ছা নেই বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে। আসন সমঝোতা হলেও, নির্বাচনে জাপার প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে রয়েছেন আতঙ্কে।
নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে আসা জাতীয় পার্টি ২৯৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়। দলীয় টিকিট পেলেও ৬ জন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। নির্বাচন কমিশন বাছাই শেষে ২৭২ আসনে জাপার প্রার্থীদের বৈধ ঘোষণা করেছে। আপিলে ৬ জনের মতো প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। ছেলে সাদ এরশাদের আসন নিয়ে টান দেওয়া এবং অনুসারীদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় ২৯ নভেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রওশন এরশাদ।

সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ