রাজনীতি

জটিল সমীকরণে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

  সদরুল আইন : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ , ৪:১৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

Oplus_131072

এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কঠিন সমীকরণের সামনে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।এই নির্বাচনে পরাজিত হলে দুজন রাজনৈতিকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

অপরদিকে এই নির্বাচনে যদি একজন প্রার্থি বিজিত না হয় তবে এখানকার পুরো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটি থেকে সেই প্রার্থি ছিটকে পড়বেন এবং এই জনপদে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটবে।

এছাড়াও এবারের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেশ কয়েকজন প্রার্থি লড়ছেন।এদের মধ্যে একজন অজ্ঞাত অপরিচিত প্রার্থি রয়েছেন যার কোন জনভিত্তি বা পরিচয় নেই জনগনের কাছে।অধিকাংশ ভোটার তার নাম জানেন না।তিনি নিশ্চিত জামানত হারাবেন,এমনটাই মনে করছেন এখানকার ভোটাররা।

অপর ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থি ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ডিগবাজি দিয়ে অগ্রহনযোগ্য বিতর্কিত ব্যক্তিতে পরিনত হয়েছেন।বিভিন্ন সময় তার অসলগ্ন কথা,এই জনপদে চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।সাবেক এমপির আশীর্বাদে তিনি নেতা বনে গেলেও রাজনৈতিক পেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে তিনি খোলস বদলে নেতা পরিবর্তন করে নিয়েছেন।

‘ওয়ান ম্যান’ রাজনৈতিক হিসেবে তিনি এখন সুপরিচিত।তিনিও এই নির্বচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত বাজেয়াপ্তের তালিকায় রয়েছেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মূল প্রতিদ্বন্দিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন ১৯৯১-২০১৮ পর্যন্ত গাজীপুর -৩ আসনে একটানা ক্ষমতায় থাকা সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক প্রয়াত এড. রহমত আলীর পুত্র ও প্রাথমিক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসির বড় ভাই এড জামিল হাসান দুর্জয়।

তার মূল প্রতিদ্বন্দি হয়ে শীর্ষ আলোচনায় রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বিএ।তিনি তেলিহাটি ইউনিয়নের কয়েকবারের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাকে রাজনৈতিক সমর্থণ জানিয়েছেন শ্রীপুরের জনমানুষের প্রতিচ্ছবি ৬ বারের পৌর পিতা আলহাজ্ব আনিছুর রহমান।একই সাথে আব্দুল জলিলকে সমর্থন জানিয়েছেন এই জনপদের অধিকাংশ চেয়ারম্যান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,প্রয়াত এমপি এড রহমত আলী তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দিয়ে যে অবিচ্ছদ্য বলয় তৈরি করে রেখেছিলেন সেই দূর্গ এখনো অটুট।প্রধানমন্ত্রীর নিকট এই পরিবারের বিশেষ গুরুত্বের কারনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে রুমানা আলী টুসিকে সংরক্ষিত, এবার সরাসরি মনোনয়ন দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করেছেন।

একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এড জামিল হাসান দুর্জয়কে মনোনয়ন না দিলেও এবার প্রতিক না থাকায় এবং ছোট বোন মন্ত্রী থাকার সুবাদে এই জনপদ নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় তিনি প্রার্থি হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছেন বলে ভোটারদের অভিমত।পিতার ব্যাপক পরিচিতি ও বোনের মন্ত্রীত্বের সুবিধা,নিজের ব্যাপক পরিচিতি এবার তার জন্য বিশেষ সুবিধা ও জয়ের পথ সুগম করবে বলে তার অনুসারিদের আত্মবিশ্বাস।

বিশেষ করে মাঠের রাজনীতিতে তার ও উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত বিশাল কর্মি বাহিনী এড জামিল হাসান দূর্জয়কে বিশেষ সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে যাবে বলে ভোটাররা অভিমত প্রকাশ করেছে।তবে আওয়ামী লীগের আসছে ৩০ এপ্রিলের সিদ্ধান্ত কি হয় তার উপর নির্ভর করবে তার ভাগ্য।

মন্ত্রী এমপিদের নিকটজন প্রার্থি হতে পারবেন না এই সিদ্ধান্তে দল অটল থাকলে তিনি জেলার পদ থেকে বহিষ্কার হতে পারেন এবং প্রশাসনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে জয়ে পথটি তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে আব্দুল জলিল সাবেক ইউপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন।সংসদ সদস্য পদেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন।গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতিক পেয়েও সে সময়কার রাজনৈতিক দুরাভিসন্ধিতে তিনি পরাজিত হন যার কারনে কেন্দ্রিয় সহানুভূতি তার দিকে রয়েছে।এছাড়াও তার সাথে রয়েছে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রিয় নেতার গভীর সখ্যতা।

বিশেষ করে সাবেক এমপি ইকবাল হোসেন সবুজের সমর্থন তার দিকে রয়েছে বলে যে গুঞ্জণ রয়েছে তা সত্যি হলে তিনি বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকবেন বলে ভোটারদের অভিমত।সাধারন ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,সাধারন ভোটারদের কাছে এবার গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি আব্দুল জলিল।

বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনের পর মিল ফ্যাক্টরির বঞ্চিত কাফেলা এখন আব্দুল জলিলের পাশে।সর্বজন পরিচিত আব্দুল জলিলের দিকে রয়েছে সাধারন ভোটারদের সহানুভূতি।

যে কারনে এবারের নির্বাচনে জামিল হাসান দুর্জয়ের শক্ত প্রতিদ্বন্দি আব্দুল জলিল এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।অন্যদিকে জনমত জরিপ বলছে এখানে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।আধিপত্য বিস্তার ও মাঠ দখলে রাখার বা প্রতিপক্ষকে মাঠে ঢুকতে না দেওয়ার মত পেশীশক্তি প্রদর্শণের শঙ্কা থাকায় এবারের নির্বাচনে বড় ধরনের সংঘর্ষ সাংঘাত ও ২০/২৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে।

এখানকার রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলেছেন, এবারের নির্বাচনে যদি এড জামিল হাসান দুর্জয় জয়লাভ করেন তবে আব্দুল জলিল ও বিশেষ করে শ্রীপুরের জনপ্রিয় মেয়র আনিছুর রহমানের রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান ঘটবে।

অন্যদিকে যদি আব্দুল জলিল বিজিত হন তবে এড জামিল হাসান দুর্জয়ের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ্যে আসবে এবং তিনি ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধির কোন চেয়ারেই আর আসীন হওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন না।একই সাথে গাজীপুর-৩ আসনে নতুন রাজনৈতিক তৃতীয়ধারার শক্তির জন্ম নেবে।আর সেই শক্তি পূর্ণ উদ্যোমে এগিয়ে যাবে ২৯ সালের সংসদ নির্বাচনের পথে।