এস এম রাফি ২৫ অক্টোবর ২০২৩ , ২:১৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। সারাদেশ থেকে এদিন দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ঢাকার এই সমাবেশে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। একই দিনে ঢাকায় আরেকটি সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগও। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ।
এ সমাবেশের পাশাপাশি রাজধানীর চার প্রবেশমুখে সকাল থেকেই পাহারা বসাবে দলটি। সেই সঙ্গে ঢাকার ২০টি নির্বাচনী এলাকায় দিনভর সতর্ক অবস্থায় থাকবে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে দলটি। বিশেষ করে বিএনপি এ কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাজধানী অচল কিংবা লাগাতার অবস্থানে গেলে তাৎক্ষণিক পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।
এরই মধ্যে বিএনপি ও সমমনাদের রুখে দিতে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি ঢাকা দখল করতে এলে ‘প্যাদানি দিয়ে’ বুড়িগঙ্গা পার করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির নেতারা। বুধবার এ নিয়ে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, উত্তর ও আশপাশের জেলার নেতাদের সঙ্গে বসছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সব সময়ই আওয়ামী লীগ সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ অশান্তি করলে সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, কোথাও দাঁড়াতেই পারত না বিএনপি। তবে ২৮ অক্টোবর ঘিরে অশান্তি, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা করতে এলে বিএনপিকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
বিএনপির রঙিন খোয়াব চুপসে যাবে– এমন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, অবরোধ আর দখলের হুমকি দিয়ে বিএনপির খায়েশ পূরণ হবে না। ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের মহাযাত্রা শুরু হবে। ওই দিন বিকেলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে জনতার ঢল নামবে।
অবশ্য ২৮ অক্টোবর দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেছেন, দলের নেতাকর্মী সজাগ থাকবেন। সতর্ক পাহারা দেবেন। কোনো উস্কানিতে পা দেবেন না। কোনো ধরনের সংঘর্ষে জড়াবেন না। জনগণের সম্পদ ধ্বংসের মতো কোনো অঘটন ঘটলে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন।
তারপরও সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কা থাকলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগে। এ ক্ষেত্রে রাজধানীর চার প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, গাবতলী ও আবদুল্লাহপুর এলাকায় সতর্ক পাহারায় থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবেন স্থানীয় নেতাকর্মী। সেই সঙ্গে ঢাকার ২০টি নির্বাচনী এলাকায় সকাল থেকে সতর্ক অবস্থান নেওয়া হবে।
ঢাকায় আওয়ামী লীগের এমপি ১৭ জন। তারা নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রস্তুত রাখার দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন। ঢাকার অন্য তিন এমপি বিরোধী দলের। ওই তিন নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন স্থানীয় থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
এদিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগে কিছুটা দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোনো কারণে নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে আওয়ামী লীগও বায়তুল মোকাররম এলাকায় সমাবেশের অনুমতি পাবে না বলে নেতারা আশঙ্কা করছেন। সে ক্ষেত্রে সমাবেশের জন্য বিকল্প চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দৃষ্টিতে এর আগের কর্মসূচিগুলোতে ভালোভাবে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজপথে থেকে বিএনপির কর্মসূচি নিষ্ফল করে দিয়েছে। ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি ঘিরে নতুন করে হুংকার ছুড়ছেন বিএনপি নেতারা। সে ক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলন থেকে কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি এলে কিংবা আবারও অগ্নিসন্ত্রাস করা হলে, তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি নামক দলটি মাহুত ছাড়া পাগলা হাতি। তাদের নেতৃত্বের ঠিক নেই। এটি যে কার কথা মতো চলছে, এটা কেউ বলতে পারবে না। তাদের আন্দোলনের অতীত অভিজ্ঞতা হলো সহিংসতা। এখনো বিএনপির ওপর বিশ্বাস করা যায় না। তারা কী চায়? মানুষের মধ্যে কিন্তু আতঙ্ক আছে। তারা যে কথা বলছে, বা চাউর আছে- তারা ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বসে পড়বে বা শহরকে কলাপস করে দেবে। এটা হলে তো জনজীবন বিপর্যস্ত হবে।
‘তারা চায়, এ সরকারকে উৎখাত করতে। এ সরকার তো সামরিক সরকার না। জনগণের দল আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ সরকারকে উল্টে ফেলে দেওয়ার শক্তি কারো নেই। গত ১৫ বছরে এত পরিকল্পনা করেছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। আগামী ২৮ তারিখের আন্দোলন সফল করতেও শত কোটি টাকা খরচ করেছে। আমার বিশ্বাস, এটিও ফানুসে পরিণত হবে। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রপ্রিয় শক্তিশালি বিরোধী দল চাই। কিন্তু বিএনপি সঠিক পথে হাঁটছে না। তারা যে পথে হাঁটছে, সে পথে তাদের মরণ অনিবার্য। যদি তারা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, নির্বাচন বা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাহলে আওয়ামী লীগেরও অধিকার আছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুখে দাঁড়াবার। আমরা তাদের রুখে দেবো।’
সূত্র: সময়ের কণ্ঠস্বর