এস এম রাফি ২৭ অক্টোবর ২০২৩ , ৯:১২ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি মহাসমাবেশের অনুমতি না পেলেও তার আগে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন দলের হাজারো নেতাকর্মী। তবে এদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। নানা কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা রাজধানীতে প্রবেশ করছেন।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ৩টায় নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মিছিল ও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। যদিও জুমার নামাজের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের জড়ো না হতে মাইকিং করা হয়। দলের শীর্ষ নেতার না সত্ত্বেও বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
আগামীকালের এ মহাসমাবেশ যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন সিলেটের হাটখোলা ইউনিয়ন যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা মুজিবুর রহমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব কৌশলে ঢাকায় প্রবেশ করেন ৫০ ঊর্ধ্ব এ বিএনপি নেতা।
বিকেলে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে কথা হলে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ যেন তাকে রাস্তায় না আটকায় তার জন্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন পাসপোর্ট। যেন পুলিশ ধরলে বলতে পারেন তিনি বিদেশগামী যাত্রী। এ কৌশলে তিনি সফল হয়েছেন।
বিএনপি কার্যালয়ের বিপরীত সড়কে থেমে থেমে রিকশাচালকরা বিএনপির মহাসমাবেশের পক্ষে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন।
কথা হলে কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, আমরা ঢাকার বাইরে থেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছি আমাদের কর্মসূচি সফল করতে। আমাদের যাওয়ার অন্য কোনো জায়গা নেই, তাই নয়াপল্টনে অবস্থান করছি। গ্রেফতার হলেও আমরা এখানে অবস্থান করবো। বিজয় অর্জন না করে ঘরে ফিরবো না।
কিশোরগঞ্জ থেকে সবজি বিক্রেতা সেজে আসা মালেক বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সবজি নিয়ে ঢাকায় আসছি। কারওয়ান বাজারে সেগুলো বিক্রি করে রাতে সেখানেই ছিলাম। সকালে আশপাশে ঘুরেছি। এখন লোক জমছে দেখে অফিসের (বিএনপির কার্যালয়ের) সামনে আসছি।
দলীয় কোনো পদ পদবি না থাকলেও কেবল সমর্থন জানাতে একই পদ্ধতিতে গত বছর ১০ ডিসেম্বরও ঢাকায় প্রবেশ করেছিলেন জানিয়ে বিএনপির এ কর্মী বলেন, ‘দেশের অবস্থা ভালো না। মানুষের মধ্যে শান্তি নেই। জিনিসপত্রের দামে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এ সরকার গেলে যদি সব ঠিক হয়।’
অন্যদিকে, ভিসা-পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে সিলেট থেকে এসেছেন আব্দুল জলিল। কিছুদিনের মধ্যে আবারও প্রবাসে ফিরে যাবেন। এ সুযোগে প্রিয় রাজনৈতিক দলকে সমর্থন জানাতে সঙ্গে করে আরও দুজনকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন তিনি। ঢাকায় প্রবেশে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আব্দুল জলিল বলেন, ‘নিজের সিস্টেমে আসছি।’
ঢাকায় প্রবেশে বাধা এড়াতে অনেকে কয়েকদিন আগেই এসেছেন। যার সম্ভব হয়েছে আত্মীয় বাড়িতে এসে উঠেছেন। কেউ আবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
ময়মনসিংহ থেকে আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে আসার নাম করে তিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করা বিএনপিকর্মী নুর আলম বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে জানিয়ে রাখছিলাম ঢাকায় আসবো। গত তিন ধরে আছি। প্রত্যেকদিনই আসি কার্যালয়ের সামনে। ভালো লাগে। এখন মানুষজন বাড়ছে আরও ভালো লাগছে। মনে সাহস আসতেছে। ইনশাল্লাহ, এবার এ সরকারের পতন হবেই।
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় প্রবেশ করা বেশ কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা হাসপাতালে ভর্তির নাম করে ঢাকায় এসেছেন। তারা বলেন, ‘চিকিৎসার পাশাপাশি সমাবেশও যুক্ত হতেই তাদের আসা।’
রাজধানীর একটি হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছিলেন জানিয়ে বগুড়া জয়পুরহাট থেকে আসা আওয়াল বলেন, ‘আমি ভর্তি ছিলাম না। তবে সঙ্গে রাত রোগী ছিল। তার সঙ্গেই আসছি। চিকিৎসকের পরামর্শ তাকে ভর্তি করা হয়েছে।’
এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আশপাশের গলিতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গে শুক্রবার বিকেলে নাইটিঙ্গেল মোড়ে ডিবি প্রধান হারুন উর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই দলই সমাবেশে অনুমতি পাবে। তবে স্থানের বিষয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। স্থানের বিষয়টি খুব দ্রুতই জানিয়ে দেওয়া হবে তাদের।’
শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৪০২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করতে দুই দল ও পুলিশের মধ্যে চিঠি চালাচালির পর অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে তাদের এ অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ সর্বোচ্চ কঠোর হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিকল্প দুটি ভেন্যুর নামসহ ৭টি তথ্য চেয়ে আওয়ামী লীগকে চিঠি দেয় পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুলিশের চিঠির চাওয়া সব তথ্য দেওয়া হয়।
আগামী ২৮ অক্টোবর বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের ডাক দিলে তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।