বিবিধ

হাড় কাঁপানো তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার দাপটে জনজীবন স্থবির

  এস এম রাফি ৪ জানুয়ারি ২০২৩ , ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

সদরুল আইনঃ

তাপমাত্রার বিশেষ হেরফের না হলেও ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে কনকনে শীতের দাপট চলছে প্রায় সারাদেশে।

বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার গতিময়তা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে হাঁড় কাপানো শীতে একেবারে চরম দুর্ভোগের আবর্তে পড়েছে জনজীবন।

ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকছে আকাশ-প্রকৃতি পুরো বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার রামদেবপুর গ্রামে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশু মো. মুশফিক।

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে গত দুইদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কুড়িগ্রাম-রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় ঝিরঝির বৃষ্টির মতো শিশির ঝরছে। গতকাল ঘন কুয়াশার কারণে উড়োজাহাজের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে না পেরে তিন ঘণ্টা আকাশে ছিলো বিমানের চারটি ফ্লাইট।

ফলে উড়োজাহাজের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। সিলেটের উড়োজাহাজগুলোর প্রতিটি ফ্লাইটই এক থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্বিত হয়েছে। নিয়মিত সময়ে যাত্রীরা এসে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকা পড়েন।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল সাড়ে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ ছিল। আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে সোয়া ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল শুরু হয়।

বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে জানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দিনে দুপুরেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। রাতের বেলা চলাচলকারী দূরপাল্লার গাড়িগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। শীতের এই হানায় প্রভাব ফেলেছে কৃষকের ধানের বীজতলাতেও।

মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীতে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। দিনের তাপমাত্রার পারদ অকস্মাৎ নেমে যাওয়ার পাশাপাশি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৫ ডিগ্রি। আর এতেই ঢাকাবাসী অনুভব করছেন ঠান্ডার প্রকটতা।

একদিনের ব্যবধানে গতকাল দেশের প্রায় সমস্ত এলাকায় তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে।

সকালে শ্রীমঙ্গলে রেকর্ড করা হয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদেশে বাড়ছে শীতজনিত রোগ-বালাই। বেড়েছে জ্বর-সর্দি,কাশি,শ্বাসকষ্ট,ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ হরেক শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ।

নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড় বেড়েছে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, শীতের তীব্রতা আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতের তুলনায় হঠাৎ করেই দিনের তাপমাত্রা কমেছে। ঘন কুয়াশার বিস্তার এবং সূর্যের আলো না পাওয়ার কারণে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান বেশ কমে গেছে। এতেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৫, যা সোমবার ছিল ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই দিনের তাপমাত্রা হিসাব করলে বোঝা যায় যে, সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এসেছে অনেকখানি। ফলে শীতের তীব্রতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

তবে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ‘একটি ঘন কুয়াশার বিস্তার উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হয়ে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

এতে করে গতকাল রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল এবং আজ বুধবার সকালে ঢাকা বিভাগসহ সারা দেশে একই অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, ঘন কুয়াশা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থাকতে পারে। এটি কেটে গেলে ঢাকায় শীত বাড়বে। দেশের অন্যান্য এলাকায় হাড় কাপানো শীত নামবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান জানান, চলতি বছরের প্রথম মাসেই তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।

এ সময় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নামতে পারে। গত মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।