রাজনীতি

শনিবার মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করবে আওয়ামী লীগ, মনোনয়নে প্রাধান্য থাকবে তৃণমূল ত্যাগীদের

  সদরুল আইন, স্টাফ রিপোর্টার ১৭ নভেম্বর ২০২৩ , ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

শনিবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সকালে এই মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নের বিপ্লব ঘটতে পারে। ১০ হাজারের বেশি মনোনয়ন ইচ্ছুক মনোনয়ন ফরম কিনতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা ধারণা করছেন।

ইতোমধ্যে মনোনয়নের ফরম বিক্রির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। একেকটি মনোনয়ন ফরমের দাম ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে মনোনয়ন ফরমের মূল্য নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো ধরনের অস্বস্তি বা আপত্তি নেই।

বরং আগামী কাল থেকে মনোনয়ন ফরম কেনার মধ্য দিয়ে ভোট উৎসব করতে চায় আওয়ামী লীগ। যেহেতু এখন পর্যন্ত এটা মোটামুটি স্থির হয়ে গেছে যে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না সেজন্য আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে কৌশলগত বড় ধরনের পরিবর্তন করতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এবার মনোনয়নে তৃণমূল প্রাধান্য পেতে পারেন। যারা বিভিন্ন সময় ত্যাগী ও পরিশ্রমী, দলের জন্য অবদান রেখেছেন কিন্তু নির্বাচনী বাস্তবতার জন্য তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি বা কোন ধরনের পুরস্কার দেওয়া সম্ভব হয়নি তারা এবার মনোনয়ন যুদ্ধে প্রাধান্য পেতে পারেন।

এবারের নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশগ্রহণ না করে তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য একটি সহজ জয় অপেক্ষা করছে এই বিবেচনা থেকে আওয়ামী লীগ সত্যিকারের ভালো প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রার্থী করতে পারে।

অতীতে দেখা গেছে যে, একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আছে, তিনি কালো টাকার মালিক, দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িত ইত্যাদি নানা অভিযোগ থাকার পরও ভোটের স্বার্থে তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এই মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ করে যারা ব্যবসায়ী, শিল্পপতি তারা সামনে চলে এসেছেন। ফলে দলের ত্যাগী কর্মীরা, যারা তৃণমূলে কঠিন সময়ে দলকে আগলে রেখেছেন, তারা প্রাধান্য পাননি।

এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে এবার চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদেরকেও তালিকায় রাখা হয়েছে। নির্বাচনে যেন তারা অংশগ্রহণ করতে পারেন বা মনোনয়ন পেতে পারেন সেই ব্যবস্থার দিকে নজর রাখা হবে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

গত কয়েকটি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতির এরকম একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে দুঃসময়ে যারা দলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদেরকে মনোনয়ন দিয়ে তিনি দলের তৃণমূলকে শক্তিশালী করার একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এবারও সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে।

আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কৌশল হল যে নির্বাচনে প্রচুর পরিমাণ বিদ্রোহী প্রার্থী এবার নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ উদারনীতি গ্রহণ করতে পারে। কেউ যদি বিরোধী প্রার্থী হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা এবং তারা যদি স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়াতে চান তাদেরকে বাধা না দেওয়ার নীতি আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে।

কারণ ২০১৪-তে দেখা গেছে যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর ফলে অনেক স্থানেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা বসে গিয়েছিল।

ফলে ১৫৩ টি আসনে বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। যে কারণে ওই নির্বাচনকে নিয়ে অনেকে এখনও সমালোচনা করে। আওয়ামী লীগ এবার সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় না। বরং বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও যে একটা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হতে পারে সেটা আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে চায়।

আর সে লক্ষ্যেই ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোটা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় কৌশল। আওয়ামী লীগ যাকেই প্রার্থী করুক তার প্রধান শর্তই হবে যে নির্বাচনে যেন তিনি একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটারকে অন্ততপক্ষে যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং কর্মী তারা যেন ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেন তা নিশ্চিত করা।

সবগুলো জরিপে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভোটারের সংখ্যা ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। আর এই ভোটাররা যদি ভোট দেন, সঙ্গে যদি জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে দাঁড়ান তাহলে ৫০ শতাংশের ওপরে ভোটার উপস্থিতি হওয়ার কথা।

সেক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও এই ধরনের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের একটি বড় কৌশল হল নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য হয়তো শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদের দরজা খুলে দিতে হবে আওয়ামী লীগকে।