অনলাইন ডেস্ক ২৬ নভেম্বর ২০২৩ , ১১:৪৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রিয়নবী (স.)-কে আল্লাহ তাআলা অনেকগুলো মোজেজা দিয়েছিলেন। এর একটি ছিল তাঁর হাতের ইশারায় চাঁদ দুইভাগ হওয়া। এই ঘটনা সত্য। কেননা এর স্বপক্ষে পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসে দলিল রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামত আসন্ন এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু। (সুরা কমর: ১-৩)
চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা নিয়ে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ) এ সম্পর্কিত হাদিসকে মুতাওয়াতির বলেছেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৪/২৭৬) এ সম্পর্কিত একটি হাদিস হলো- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা মিনায় রাসুলে কারিম (স.)-এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হলো এবং এক খণ্ড পাহাড়ের পশ্চাতে চলে গেল ও এক খণ্ড পাহাড়ের উপরে রইল। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো। (সহিহ বুখারি: ১/৫৪৬; সহিহ মুসলিম: ২/৩৭৩)
অন্য হাদিসে হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, মক্কাবাসীরা রাসুল (স.)-এর কাছে কোনো নিদর্শন দেখতে চাইল। তখন আল্লাহ তাআলা চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখিয়ে দিলেন। তারা দেখতে পেল যে, চাঁদের দুই খণ্ড হেরা পাহাড়ের দুই পার্শ্বে চলে গেছে। (সহিহ বুখারি: ১/৫৪৫; সহিহ মুসলিম: ২/৩৭৩; জামে তিরমিজি: ৩২৮৫; মুসনাদে আহমদ: ৩/১৬৫)
চাঁদ দুইভাগ হওয়ার ঘটনা
তাফসিরকারকদের বর্ণনা অনুযায়ী, চাঁদ দুইভাগ হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিলো মক্কার মিনা প্রান্তরে নবীজির নবুয়তের নবম বছরে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইহুদিদের এবং মক্কার মুশরিকদের ইসলামের পথে আহ্বান করছিলেন। মুশরিকরা সাড়া দেয়নি, উল্টো ইসলামকে বাধাগ্রস্ত করার পন্থা অবলম্বন করেছিল। এসময় ইহুদি পণ্ডিতেরা কোরাইশ নেতাদের একটা বিস্ময়কর কৌশল শিখিয়ে দিল। তারা বলল, মুহাম্মদ জাদুকর কি-না যাচাইয়ের একটা উত্তম পন্থা হলো- জাদুর প্রভাব শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ থাকে। আসমানে এর কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। তাই তোমরা মুহাম্মদকে বলো চাঁদকে দুই ভাগ করে দেখাতে।
ইহুদিদের মাথায় এমন চিন্তার পেছনে আলেমরা ধারণা করেন, নবী মুসা (আ.)-এর লাঠির ইশারায় নদী দুই ভাগ করার ঘটনা থেকে ইহুদিরা হয়ত ভেবেছিল- দুনিয়ার নদীর চেয়ে আকাশের চাঁদ দুই ভাগ করা কঠিন হবে। কোরাইশ নেতারা খুশিমনে ইহুদিদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করল এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-কে কুপোকাত করার মানসে চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করার দাবি করল। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করলেন, এরপর হাতের ইশারায় চাঁদকে দুই ভাগ করলেন। মুহূর্তেই চাঁদ ভাগ হয়ে পূর্ব ও পশ্চিমে ছিটকে পড়ল। দুই টুকরার মাঝখানে ‘হেরা’ পাহাড় আড়াল হয়ে গেল। এরপর আবার দুই টুকরা এসে এক সঙ্গে যুক্ত হলো।
কাফেরদের দ্বিচারিতা
এরপর রাসুলুল্লাহ (স.) উপস্থিত সবাইকে বললেন, দেখ এবং সাক্ষ্য দাও। চোখের সামনে এই মোজেজা দেখার পর কোনো জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে নবীজির নবুওতকে অস্বীকার করার উপায় ছিল না, কিন্তু এরপরও মুশরিকরা ঈমান আনেনি। উল্টো তারা এ ঘটনাকে জাদু বলতে লাগল।
তারা বলল- মুহাম্মদ সারা বিশ্বের মানুষকে জাদু করতে পারবে না। তাই এখানকার অল্প মানুষকে জাদুগ্রস্থ করেছে, তোমরা বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লোকদের জন্য অপেক্ষা কর। তারা কি বলে শুনে নাও। এরপর বিভিন্ন স্থান থেকে আগন্তুককদেরকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করল। তারা সবাই চাঁদকে দুই ভাগ অবস্থায় দেখেছে বলে স্বীকার করল। বহিরাগত মুসাফিরদের সাক্ষ্যের পরও মুশরিকেরা নিজেদের জেদ ও অহংকারের কারণে ঈমান আনল না। কাফেরদের এই দ্বিচারিতার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে, তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে যে, ‘এটা তো চলমান জাদু’। তারা মিথ্যারোপ করে এবং নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে। অথচ প্রত্যেক কাজের ফলাফল স্থিরীকৃত হবে (সুরা কামার: ২-৩)
নবীজি (স.)-এর হাতে চাঁদ দুই ভাগের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন হজরত আলী, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ, জুবায়ের ইবনু মুত্বইম (রা.) প্রমুখ সাহাবিরা। তারা ছাড়াও সাহাবিদের বড় একটি দল এই ঘটনা সম্পর্কিত হাদিস বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম হলেন- আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, ইবনে আব্বাস ও আনাস ইবনে মালেক (রা.)। (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৩/৩৫৪, ৩৬১; ফাতহুল বারি: ৭/২২১; সহিহ বুখারি: ১/৫৪৫; সহিহ মুসলিম: ২/৩৭৩; আদ্দুররুল মানসুর: ৬/১৩২-১৩৪; তাফসিরে কুরতুবি: ১৭/১২৫-১২৮; জামে তিরমিজি: ৩২৮৫; মুসনাদে আহমদ: ৩/১৬৫; তাফসিরে মাজহারি: ৯/১৩৫)