সারাদেশ

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজভিত্তিক পূনর্বাসনে অকুপেশনাল থেরাপি

  নিজস্ব প্রতিবেদক ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পূনর্বাসন কেন্দ্র (সি আর পি) এর একাডেমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইন্সটিটিউট (বিএইচপিআই) এর অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কোর্স কারিকুলাম এর অংশ হিসেবে কমিউনিটি বেইজড রিহ্যাবিলিটেশন (সিবিআর) প্লেসমেন্ট সম্পন্ন করতে তারা ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলায় অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন।

বিএইচপিআই এর অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের প্রভাষক মোঃ হাবিবুর রহমান ও মোঃ সাদ্দাম হোসেন এর তত্ত্বাবধানে ২৪ জন শিক্ষার্থী উক্ত উপজেলার ১১ টি গ্রাম (বাদামিয়া, বামনাখালি, বাগান, হরিয়াগুনি, আউলটিয়া, সতেরপাড়া, করুয়াগাছা, রাগামারা, পাঁচপাড়া, দূর্গাপুর, দাসপাড়া)- জরিপ করেন। জরিপ অনুযায়ী অত্র এলাকায় ৩৩৫ জন ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়, যাদের মধ্যে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত ব্যক্তি আছে্ন ১১ শতাংশ, অটিজ্ম ও এডিএইচডি ২ শতাংশ, ইন্টিলেকচুয়াল ডিজএবিলিটি ৩ শতাংশ, ডাউন সিন্ড্রোম ২ শতাংশ, স্ট্রোক ১১ শতাংশ, মেরুরজ্জুতে আঘাত প্রাপ্ত ১ শতাংশ, মস্তিষ্কে আঘাত ১ শতাংশ, মাস্কিউলোস্কেলেটাল ডিজওর্ডার যেমনঃ কোমড় ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, আর্থাইটিস আছে ৫৩ শতাংশ, অঙ্গহানী ১ শতাংশ, মানসিক অসুস্থতা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, গুলেইন বারি সিন্ড্রম ০ দশমিক ৩ শতাংশ, বহুমূখী প্রতিবন্ধিতা ৪ শতাংশ এবং কঞ্জেনিটাল হাইপোপ্লাসিয়া, ডিসকাইনেশিয়া, হার্ট ডিজিজ, পারকিনসন ডিজিজ ০ দশমিক ৩ শতাংশ করে। যাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ ব্যক্তি পূর্বে থেরাপউটিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

স্বল্প সময়ে সকলের জন্য অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলেও চাহিদার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীরা ৩৮ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে তিন সপ্তাহব্যপী বিনামূল্যে অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান, প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবেশগত পরিবর্তন (র‍্যাম্প, সিঁড়ি, টয়লেট মডিফিকেশন, চেয়ার মডিফিকেশন, স্ট্যান্ডিং ফ্রেইম, হ্যান্ড রেইল) সহ প্রয়জনীয় অকুপেশনাল থেরাপি ইকুইপমেন্ট (সিলিন্ড্রিকাল গ্রাস্প, ম্যান্যুপুলেশন বোর্ড, ভেল্ক্রো বোর্ড, এডুকেটিভ ব্যানার, ফুট রেস্ট, কর্ণার চেয়ার, হ্যামক, মডিফাইড চামচ, লো ট্রলি, ক্রাচ, স্পেশাল চেয়ার, রিচার, ব্যাক কুশন, সিট কুশন ইত্যাদি) বিনামূল্যে প্রদান করেছেন। বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধিতা ও এর ঝুঁকি, প্রতিরোধ সহ করণীয় এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পাঁচপাড়া, কোরুয়াগাছা, বাদামিয়া ও সতেরোপাড়ায় তারা পাঁচটি উঠান বৈঠকের আয়োজন করেন। উপস্থিত ১২৫ জন অধিক গ্রামবাসীকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গঠন ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সহানূভূতিশীল আচরণ নিশ্চিত করা এবং তাদের পূনর্বাসনে সকলকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়াও মঠবাড়ি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ-এ শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে সচতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং
বেলা রিহ্যাবিলিটেশন সল্যিউশন পয়েন্ট, ময়মনসিংহ কলেজ অফ ফিজিওথেরাপি এন্ড হেলথ সায়েন্সেস –এ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পূনর্বাসনে অত্র এলাকায় অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সঠিক চিকিৎসার আওতায় আনা ও তাদের স্বনির্ভর করার উদ্দেশ্যে অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে জনমনে সচেতনা বৃদ্ধি ও অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবাকে সহজলভ্য করতে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। সেই সাথে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বনির্ভর করে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ঝুঁকি কমিয়ে কর্মসংস্থানে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতধারায় যুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি, এক্ষত্রে অকুপেশনাল থেরাপির কোন বিকল্প নেই। সমাজসেবা অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে আছে দেশের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ, যাদের পূনর্বাসনে কাজ করছেন মাত্র ৪০৮ জন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এই সংকট নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অকুপেশনাল থেরাপি কোর্স চালু এবং অতিসত্ত্বর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি ও বিশেষায়িত হাসপাতালে, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট নিয়োগ করা জরুরি।