নিজস্ব প্রতিবেদক ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ , ৮:০৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ট্রান্সপারেনন্সি ইন্টারন্যাশনাল একটি রিপোর্ট পেশ করেছে, তারা বলতে চাচ্ছে যে এটি গবেষণা গত ৭ জানুয়ারিতে যে নির্বাচন হয়েছে সে নির্বাচনে গুণগত মান নিয়ে তারা গবেষণা করেছে এটি তাদের দাবি। নির্বাচন হওয়ার ১০ দিনের মাথায় তারা এই গবেষণাটি করেছে এবং বেশকিছু উপসংহারে তারা পৌঁছেছে। এতো অল্প সময়ে এতো বড় একটি কাজ করা কি করে সম্ভব, এটি আমার বোধগম্য নয়। টিআইবির এই গবেষণার আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ না করেই রিপোর্ট দিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৩০০টি আসনের মধ্যে দৈব্যচয়ণের মাধ্যমে তারা ৫০টি আসন সিলেকট করেছে। তথ্য প্রদানকারী মূলত তাদেরকে তথ্য না দিয়ে তাদের মতামত দিয়েছে। যেটা মতামত সেটাকে তারা তথ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই ৫০টি আসনে কতগুলো কেন্দ্র বা কতগুলো পোলিংবুথ তারা তাদের গবেষণায় নিয়েছে এটা উল্লেখ করেনি, তার কোন পদ্ধতি অনুসরণ করেছে সেটা উল্লেখ করা নাই।
তিনি জানান, গোটা বাংলাদেশে ৪২ হাজার ৩শ’ ৫০টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৬১ হাজার ৫শ’ ৬৫টি পোলিংবুথ ছিলো। তারা ক্যালকুলেশনে পৌঁছে গেছে যে ৫১ শতাংশ আসনে পোলিংবুথে প্রকাশ্যে সীলমারা হয়েছে এবং জাল ভোট পড়েছে এটা একটা অসম্ভব বিষয়।
টিআইবিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিকমানের কোনো জার্নালে তাদের এই গবেষণা প্রকাশ করবে না। কারণ এটি গবেষণার আন্তর্জাতিক মানদন্ডের কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করেনি। এটা গুজামিল দিয়ে একটি রিপোর্ট দাঁড় করানো হয়েছে খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি এই কাজটি করা হয়েছে এবং যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের নির্বাচন পলিটিক্যাল সাইন্স এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণার কোনো অভিজ্ঞতার কোনো কানেকশন নাই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ড্রোনাল ট্রাম্পের নির্বাচনের পরে প্রতিষ্ঠানের ওপর যেভাবে আস্তা চলে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের এবং সেগুলো খুব ভয়ানক। আমরা যখন চেষ্টা করছি ইলেকশন কমিশনকে স্বচ্ছ করা আপনারা জানেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে ৮২টি নতুন রিফর্ম করা হয়েছে, ইলেকশন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য। ইলেকশন কমিশন গঠন আইন করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘমেয়াদী ইলেকশন কমিশনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। মানুষের আস্থা আনার চেষ্টা করছি। অথচ সত্যি কথা না বলে এ ধরণের গোজামিল দেওয়া হাজির করে অসত্য তথ্যের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করলে প্রতিষ্ঠান দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে বলেন প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।
বাংলাদেশের যে সুশীল সমাজ আছে তারা সততা, নিষ্ঠার সাথে আন্তর্জাতিক যে মানদন্ড অনুসরণ করে তার ফলাফল জনগণের সামনে উপস্থাপন করবেন। গুণগত, কোয়ালিটিটিভ বা সংখ্যাগত বা কোয়াটিটিভ দুটি মিশ্র পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। কিন্তু এখানে কনফিডেন্ট ইন্টারফেল কোথায়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, টিআইবি তিনজন করে বেছে যে ১৪৯জন প্রার্থীর তথ্য সংগ্রহ করেছে সেই বিষয়টি কিভাবে নির্ধারণ করলেন। সেটার কোনো উল্লেখ নাই। কোনো সাইন্স নাই এই গবেষণায়। ইলেকশন কমিশন ৭৬২জনকে শোকজ করেছে এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যাদেরকে ৩ বার করে শোকজ করা হয়েছে। কেন শোকজ করেছে কিছু না কিছু অভিযোগ এসেছে, তাই করেছে। মামলাদায়ের করা হয়েছে ৬৩টি। কেন মামলাদায়ের করা হয়েছে। নির্বাচনের বিষয়ে কেউ কেউ হয়তো সঠিকভাবে মেনে চলেনি, সে জন্য করা হয়েছে।
১৪০টি কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরণের অনিয়মের অভিযোগ আসছে। ২১টি কেন্দ্রে পোলিং সাসপেন্ড করেছে ইলেকশন কমিশন, ৯টি কন্সটিটিউশনে ৪২ জনকে এরেস্ট করা হয়েছে। যেগুলোতে অনিয়ম হয়েছে সেগুলোতো একশন হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থীতাই বাতিল হয়েছে, এটি নজিরবিহীন বাংলাদেশের ইতিহাসে। নির্বাচনের কমিশনের এই যে শক্ত অবস্থান এটি কোথায় বলা হয়নি।
আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিরা নজিনেশন নিয়ে অনেকে পরাজিত হয়েছে। শক্তিশালী নেতা যারা তারা দুর্বল স্থানীয় নেতার কাছে পরাজিত হয়েছে। আমাদের শীর্ষ স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা পুলিশ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের যাদের অনেক আত্মীয়স্বজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন নৌকার প্রার্থী হয়েছেন যেটি আইনানুগভাবে বৈধ কিন্তু পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যদি স্টিক রোল না নিতো নির্বাচন যদি প্রোপারলি ফি এ- ফেয়ার না হতো তাহলে এ ঘটনাগুলো ঘটার সম্ভাবনা ছিলো কি না-এটা টিআইবির কাছে আমার প্রশ্ন।
টিআইবি বলছে যে, নির্বাচন কমিশনকে আরপিও সংশোধন করে দুর্বল করা হয়েছে। টিআইবি বলছে এই সংশোধনটি করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নির্বাচন কমিশনকে দুর্বল করার জন্য দুটোই অসত্য কথা। প্রথম কথা এটি করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নয়, এটি করা হয়েছে যারা ভোটার তাদের ভোটের রাইটস যেটা কন্সটিটিউশন দেয় সেটা রাইটস করার জন্য। এই সংশোধনের মাধ্যমে ইলেকশন কমিশনের ক্ষমতা এক বিন্দুও কমেনি।
তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ৩টার সময় ২৭ শতাংশ এবং ৪টার সময় সেটা ৪০ শতাংশ কি করে হলো। গবেষণা করার উদ্দেশ্যে হলো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া না। ৩টার সময় যে টার্ন আউটের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে সেটি কিন্তু ৩টার সময়ের রিপোর্ট নয়। প্রিজাইডিং অফিসাররা বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের যে ভোটের তথ্য পাচ্ছে সেখান থেকে ঢাকা ইলেকশন কমিশনে পাঠাচ্ছে। এই যে তথ্য পাওয়া এবং এটাকে ক্যালকুলেট করা যোগ করা ঢাকায় পাঠানো এবং পাঠিয়ে তারা রিসিভ করার পরে আবার যোগ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনের অফিসে পাঠানো এর মাঝখানে একটা গ্যাফ আছে। পুরো ঘটনা ঘটার পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাতে আসা পর্যন্ত এক থেকে দেড় ঘন্টার একটা গ্যাফ আছে। অর্থাৎ দেড় থেকে দু ঘন্টার আগের।
এটা সিইসি প্রক্সিমেট হিসাব দিয়েছে। তার হাতে যতো ডাটা আসছে। ৪টার সময় কিন্তু বলতে পারেন নাই ৪১.৮ শতাংশ, সেটা আরো পরে দিয়েছে। শীতের সকালে সকালবেলা ভোট পড়ার হার কম থাকে। যতো সূর্য উঠেছে দিন বেড়েছে ততো ভোটের হার বেড়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই গণতান্ত্রিক সমাজে যে কোনো সিভিল সোস্যাইটি যে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার রাখে। আমাদের শুধু আবেদন থাকবে আমাদের ফাইনান্সিয়াল নিয়ে কথা বললে হবে না। আমাদের কেউ ভুলত্রুটি ধরে দিলে সেটা আমরা মেনে নিবো এবং শুদ্ধ করার চেষ্টা করবো। এ ধরণের একশনের ব্যাপারে আমরা আগ্রহী নয়।
আমি কোনো সংস্থা বা সংগঠনকে বিশেষ কোনো নামে বলতে চাই না আমি তাদের ভুলভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দিতে চাই। বাকি উপসংহারে আপনারা যাবেন। একটা ভ্রান্ত রিপোর্টকে গবেষণা বলা এবং সেখান থেকে জাতিকে বিভ্রান্ত করা এটা যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয় হবে, আপনারা সেটা বলবেন। আমি মনে করি গণতন্ত্রকে দুর্বর করার ক্ষেত্রে টিআইবি বা এদের মতো সংস্থাগুলোর অনেক অবদান আছে। কিভাবে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং তার সারাজীবনের ত্যাগ এবং নিজেকে তিনি রাজনীতিতে উৎসর্গ করেছেন। আজকে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যে আছি এটা বঙ্গবন্ধুকন্যার অবদান।
নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে শক্তিশালী করা হয়েছে এটা আন্তর্জাতিক সংস্থা বা আরআরআই বা এনডিআর সেটাকে টিআইবি বা অন্যান্য এ ধরণের প্রতিষ্ঠান একনজেল করেছে। তারা কি বলেছে এই কাজগুলো ভালো হয়েছে। তারা কি বলেছে বিরোধী দল আসা উচিত। আরো কিভাবে গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করার জন্য ভবিষ্যতের জন্য, দীর্ঘমেয়াদে একটা পারমানেন্ট সলিশন কিভাবে করা যায় সেটার কথা তারা কখনো বলেছে। সেই রোলটা তো তারাও করেনি। ঘুরেফিরে একটা এডহক সলিশন কেয়ারটেশার সলিশন যেটা আমরা ট্রাই করে ফেল হয়েছে, ফেল করেছে কারণ এই কেয়ারটেকার থেকেই দুই বছরের ওয়ান ইলেভেন সরকার, যেটা গণতন্ত্রকে হুমকি দিয়েছে। সেটাকে বারবার তারা নিয়ে এসেছে। যেটা সত্য তার পক্ষে থাকা। সেই কাজটি তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে হয়তো আমরা গণতান্ত্রিকভাবে আরো বেশি ।
বিএনপি এবং জামাতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রমাণিত উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জামাত যে ভায়েলেন্সটা করে যে কারণে এরা আবার সহিংসতা করার জন্য আরো উৎসাহিত হয়। মানুষকে পুড়িয়ে মারলেন, পরে সমাজে একটা কনফিসেশন তৈরি করলেন সমাজে এবং কেউ তাদেরকে সরাসরি দায়ী করছে না। তখন তারা আবার উৎসাহী হয়। মানুষ তো আমাদের দায়ী করছে না। এই দায়িত্ব তো টিআইবি বা তাদের মতো সংস্থাগুলো পালন করে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশটাকে নিয়ে এসেছেন। এবং কতবড় ঝুঁকি নিয়েছেন, আমরা তো ওয়েলকাম করেছিলাম বিএনপিকে। বিএনপি আসলো না কেন। আমরা বিএনপি অনেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও ফিরে আসতে চেয়েছিলো। বিএনপি আসে নাই বা বিএনপিকে আসতে দেওয়া হয় নাই। সেই শীর্ষ নেতা যে পলাতক আসামী যে নিজে নির্বাচন করতে বিএনপিকে আসতে দেয় নাই। তার ফলে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের স্বার্থে ঝুঁকি নিয়েছে দলের ভিতরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপেন করে দিয়েছে। সেটিকে প্রশংসা না করে সেটিকে বিভিন্নভাবে বিকৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু আমরা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করি, আমরা সহনশীলতা বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ তো এমন একটি পর্যায়ে গেছে যে শুধুমাত্র সমালোচনা যে তা নয় অসত্য মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে যে বদনাম করা হয় সেগুলো আমরা অবজার্ভ করি সহ্য করি। আমাদের সেই সহনশীলতার জায়গা আছে। এগুলো সংস্থাকে আপনারাও চ্যালেঞ্জ করেন, জবাবদিহিতার আওতায় আনেন, তাদেরকে প্রশ্ন করেন। যারা এ ধরণের কথা বলছে তারা অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তাদের বক্তব্যকেও চ্যালেঞ্জ করাও উচিত। সেটা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের স্বার্থেই উপকার হবে।