রাজিবপুর(কুড়িগাম)প্রতিনিধি ২০ জানুয়ারি ২০২৪ , ১০:২২ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের রাজিবপুরের জন-জীবন। প্রায় ১৫ দিন থেকে দেখা মিলছে না সূর্যের। দিন ও রাতে একাধারে ঝড়ছে কুয়াশা। মঙ্গলবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। এমন পরিস্থিতিতে রাজিবপুরে শীতজনিত কারণে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে অর্ধশতাধিক ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগি। তাদের অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক। দেখা দিয়েছে ওষুধ সংকট।
বুধবার দুপুরে রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, শীতের তীব্রতা বাড়ায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে শীতজনিত রোগের সংখ্যা। গত ৭ জানুয়ারী থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এক সপ্তাহে অর্ধশতাধিক ডায়রিয়ারোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে ৩৫ শিশু ও ১৫ বয়স্ক মানুষ।
রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুধু প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছু দেওয়া হয় না হাসপাতাল থেকে।
বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে কলেরা স্যালাইন, ডিএনএস,ডিএ, এন এস স্যালাইনসহ অন্য সব ওষুধ। এতে বিপাকে পড়েছেন ডায়রিয়াসহ সব রোগীর অভিভাবকরা।
গতকাল সোমবার বিকেলে ডায়রিয়া আক্রান্ত ২ বছরের ছেলে তাওহীদ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন মা হুনুফা বেগম । তাঁর বাড়ি উপজেলার মরিচাকান্দি এলাকায়। তিনি বলেন, দুই দিন ধরে অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন তিনি। দুই দিনে কোন ওষুধ হাসপাতাল থেকে কিছুই পাইনি শুধু মাত্র ৫ টাকা দামের খাবার স্যালাইন ছাড়া সহ অন্যসব ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনতে হয়েছে। সব ওষুধ যদি কিনতে হয় বাইরে থেকে তাহলে সরকারি হাসপাতালে এসে লাভ কি? বাড়িতেই চইলা যামুগা।
ডাংধরা ইউনিয়নের কারখানা পাড়া এলাকার জাকির হোসেন (৫৫) শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন পাঁচ দিন ধরে। তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলেন ৫ দিনে শুধুমাত্র হাসপাতালের খাবার আর দুইটা প্যারাসিটামল দিয়েছে চিকিৎসক। অন্য সব ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনতে হয়েছে। প্রয়োজনে নার্সদের ডাকা হলে টালবাহানা করেন।
কথা হয় মৌলভীরচর এলাকার ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রবিবার সকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত তিন বছরের সন্তান আবিরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন তিনি। এখানে খাবার স্যালাইন ছাড়া আর কোন ওষুধপত্র কিছু দেয়নি সমস্ত প্রয়োজনীয় সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে তাঁকে।
উপজেলার জালচিরা পাড়া গ্রামের মৃত রুপচান এর ছেলে ফুলচান বলেন গত তিন থেকে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ডাক্তার শুধু স্যালাইন টাই আমাকে দিয়েছে বাকি সব ওষুধপত্র কিনতে হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এসেও যদি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়,তাহলে গরিব মানুষ যাবে কোথায়?
আমি অত্যন্ত গরিব মানুষ এখন বাইরে নিয়ে যেতে বলছে বাইরে চিকিৎসা করতে অনেক খরচ আমি গরিব মানুষ কিভাবে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাবো আমাকে এখন কে দেখবে?
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সারওয়ার জাহান বলেন, চাহিদা দিয়ে রেখেছি ওষুধ সরবরাহে নাই তাই দিতে পারছি না।