নিজস্ব প্রতিবেদক ৯ আগস্ট ২০২৪ , ৯:০৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
গত ৫ আগস্ট নতুন প্রজন্মের নতুন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাক্কালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা সহ সারাদেশে বেশিরভাগ পুলিশ স্থাপনা আক্রমণের শিকার হয়। নির্মমভাবে নিহত হয় শত শত পুলিশ সদস্য। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে আরম্ভ করে থানা ফাঁড়ি সর্বত্র ধ্বংসলীলা চলে। পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে গেলে কমান্ড কন্ট্রোল ভেঙে পড়ে পুলিশ বাহিনীতে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় পুলিশ সদস্যগণ যে যার মত করে জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যায়। পুরো ঢাকা শহর ঘুরে দেখা যায় কোন থানায় অফিসার ফোর্স নাই।
সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু ডিএমপির দক্ষিন খান থানা। এই থানার স্থাপনায় একটি ইটের ঢিলও পড়েনি। আহত হননি কোন পুলিশ সদস্য। ওসি আশিকুর রহমান সহ সকল সদস্য থানায় অবস্থান করছেন। চলছে থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম।
অনলাইন জিডি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে দক্ষিনখান থানা পুলিশ সনাতন পদ্ধতির হাতে কাগজে লেখা জিডি বই বের করে তাতেই লিপিবদ্ধ করে চলেছেন থানার দৈনন্দিন কার্যক্রমের সকল ঘটনাবলী। সরে জমিন ঘুরে দেখা যায় থানার সেন্ট্রি পোস্টের সামনে সেন্ট্রি আনসার সদস্য তৎসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ডিউটি করছেন থানা পাহাড়ায়,তাদের সাথে বসে আলাপচারিতায় মগ্ন অফিসার ইনচার্জ নিজেই।
এ বিষয়ে থানায় নব যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জ আশিকুর রহমান পিপিএম কে প্রশ্ন করা হয় কিভাবে তিনি এমন সাহসিকতার কাজ করতে পারলেন?জবাবে তিনি জানান বেতার মারফত যখন জানতে পারলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা নানাবিধ পুলিশ স্থাপনায় এবং পুলিশের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে হামলায় লিপ্ত তাৎক্ষণিকভাবে কোন সিনিয়র অফিসার ওয়ারলেস কিংবা মোবাইল ফোনে কোন রেসপন্স করেননি।
তখন আমি বুঝে গেছি নিজেকে রক্ষার কৌশল নিজেকেই নির্ধারণ করতে হবে। থানার পাশের মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলি নিজেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী রূপে পরিচয় দিয়ে থানার স্থাপনা সরকারি সম্পদ এবং দক্ষিণ খানবাসীর জন্য অপরিহার্য বলে তাদেরকে বোঝাই।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ কে দেখে থানায় নিয়ে আসি। বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মি কোথায় নিয়ে আসি। আমার কথা বার্তায় সবাই একমত পোষণ করেন এবং ঐকের ডাক দেন দক্ষিনখান থানা রক্ষায়। তখন থেকে আজ অবধি পালাক্রমে ২৫-৩০ জন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ২৪/৭ থানার সামনে থানা রক্ষার বিউটি পালন করে। একাধিকবার সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিবর্গ মিছিল সহ থানায় আক্রমণের চেষ্টা করলেও পুলিশ জনতার যৌথ বেরিগেট থানা ভবনের কোন ক্ষতি কিংবা কোন পুলিশ সদস্যের কোন ক্ষতি হতে দেননি।
দক্ষিণ খান বাসি থানায় অবস্থানরত অফিসার ফোর্সের খাওয়ার ব্যবস্থাও করেন নিয়মিতভাবে। দক্ষিনখান এলাকা বাসীর এহেনও মানবিক আচরণে আমি মুগ্ধ বিমোহিত। আমৃত্যু দক্ষিণ খান বাঁশির প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো ইনশাল্লাহ। যদি দক্ষিন খান বাসীর সেবার সুযোগ মহান রাব্বুল আলামিন আমার উপর নাস্ত রাখেন তবে আমি আমার অফিসার ফোর্স সহ তাদের কাংখিত সেবা নিশ্চিত করে এই ঋণ লাঘবের প্রাণ ৫০ টা করবো ইনশাআল্লাহ।
ওসি আরো বলেন শুধু দক্ষিণ খান থানার সুরক্ষায় নয় রাত তিনটার দিকে যখন বেতারে বারবার উত্তরা পূর্ব থানায় বন্দী অবস্থায় ঢাকা পুলিশ সদস্যদের আর্তনাদ শুনতে পাই এবং তাদের উদ্ধারে কেউ সহযোগিতায় এগিয়ে না আসলে আমি দক্ষিনখান থানায় এলাকার স্বেচ্ছাসেবী দের ৪০-৫০ জনকে সঙ্গে নিয়ে থানার পুলিশ সদস্য সহ উত্তরা পূর্ব থানায় চলে যাই। সেখানে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার মাঝে মিশে গিয়ে সুকৌশলে থানায় ঢুকে আট পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে দক্ষিনখান থানায় নিয়ে আসি।
মহান স্রষ্টার নিকট লাখো কোটি শুকরিয়া যে আটজন পুলিশ সদস্যের প্রাণ রক্ষায় আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কাজে লেগেছে।
ইহাতেই প্রতিীয়মান হয় যে যদি পুলিশ অফিসার যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারেন এবং জনগণের সাথে মিশে জনবান্ধব হতে পারেন তাহলে শত দুর্বিপাকেও নিজেকে নিরাপদে রেখে আইনের শাসন নিশ্চিত করা যায়। ভীরু কাপুরুষের দল চিরকাল পালায় তাতে বীরের মনোবল ক্ষুন্ন হয় না। বাংলার প্রতিটি থানায় থানায় কেন বান্ধব পুলিশিং চালু হোক। কায়েম থাকুক আইনের শাসন। নিরাপদ এবং শৃঙ্খলিতে থাকুক দেশের কটি জনগণ।