বিবিধ

ফুলবাড়িতে ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে গরুর বদলে অটোরিক্সা দিয়ে টানছে তেলের ঘানি

  উত্তম কুমার মোহন্ত ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:গ্রাম ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৫:২০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

ঐতিহ্য মানে পিছনে তাকানো নয়, বরং সামনে এগিয়ে চলা এটি আমাদের শিকড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, এবং এগিয়ে যাওয়ার ও অনুপ্রেরণা যোগায়। সেই পুরোনো এবং নতুনের সংযোগ স্থাপনের একটি অভিনব দৃশ্যের দেখা মিলেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর মৌজার আড়াজি নেওয়াশী গ্রামে।কাঠের তৈরি সরিষার তেলের ঘানি টানছে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা।

সরেজমিনে গিয়ে তেলের ঘানির মালিক মোঃ মুকুল মিয়ার সাথে কথা বলে জানাযায়,ঘানির মাধ্যমে সরিষার তেল মারাইয়ের ব্যাবসা তার বাপ-দাদার থেকে আসা,তখন থেকে গরু দিয়ে তেলের ঘানি টেনে আসছি,পরবর্তীতে ইউটিউব দেখে নতুন ধারনা পেয়ে গরু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিক্সা কিনে গরুর বদলে অটোরিক্সার মাধ্যমে বাপ-দাদার পুরনো ঐতিহ্য কে ধরে রাখতে নতুন উদ্যমে তেল মারাইয়ের ব্যাবসা শুরু করে দেই। তিনি আরও জানান,গরু দিয়ে ঘানি টানাতে সময় বেশি লাগতো খরচ ও বেশি হতো, এখন অটোরিক্সার মাধ্যমে কম খরচে স্বল্প সময়ে বেশি লাভ হচ্ছে। এখন আমার ঘানিতে খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে চাহিদাও বাড়ছে স্থানীয় বাজার সহ অনলাইনেও বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছি।

অভিনব কায়দায় তেল উৎপাদন করে মুকুল মিয়া এখন স্বাবলম্বী।তার ঘানির খাঁটি সরিষার তেল আশপাশের প্রতিটি বাজারে বেশ সারা ফেলেছে,শীতকালে বাজারে সরিষার তেলের চাহিদা এখন বেড়েছে। যেভাবে তৈরি হয় খাঁটি সরিষার তেল, দানাদার সরিষা ঘানিতে দিয়ে প্রাকৃতিক পরিচর্যায় একেবারে সরিষার নির্যাস থেকে প্রস্তূত হচ্ছে তেল। এটি শুধু খাবারেই নয় শীত কালের কারণে অনেকেই শরীরেও ব্যবহার করছেন,খাঁটি সরিষার তেল বলতে একটা কথা। বাজারে সচরাচর ভাবে বোতলজাত সরিষার তেল পাওয়া গেলেও বিশুদ্ধ খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া দুষ্কর।

কাশিপুর বাজারের তেল ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন, গংগারহাট বাজারের মিঠু মিয়া,খড়ি বাড়ি বাজারের ধনেশ চন্দ্র রায় বলেন, মুকুল মিয়ার কাঠের ঘানিতে উৎপাদিত খাঁটি সরিষার তেল একদম নির্ভেজাল। লোহার ঘানিতে তেল পুরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে,এই ঘানিতে তা সম্ভব নয়।কাঠের ঘানিতে সরিষার নির্যাস থেকে উৎপাদিত খাঁটি সরিষার তেলের রং স্বাদ গন্ধ গুনগত মানসম্পন্ন হত্তয়ায় বাজারে ক্রেতাদের কাছে দিন দিন চাহিদা বেড়েই চলছে। ব্যাপক ভাবে সারাও ফেলেছে। শিমুলতলা বাজারের সরিষার তেল ক্রেতা আলমগীর হোসেন জানান, আগে খাঁটি সরিষার তেল হিসেবে বোতল জাত তেল খেয়েছি, কিন্তূ এখন মুকুলের ঘানির খাঁটি সরিষার তেল খাওয়া শুরু করে দেখি একদম স্বাধে গন্ধে খাঁটি সরিষা, আসল থুইয়া এতদিন টাকা দিয়ে ভেজাল কিনে খেয়েছি।এখন আমি খাঁটি সরিষার তেল কিনি এবং অন্যকে কিনতে উৎসাহিত করি।

এব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা,ললিত মোহন রায় জানান, অভিনব কায়দায় তেল উৎপাদনের এই উদ্যোগকে স্থানীয়ভাবে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। দেশীয় এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারী মালিকদের আরো উৎসাহিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবেশ বান্ধব এ পদ্ধতি স্থানীয় কৃষি ও উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণাও হতে পারে।