শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার প্রতিফলন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে রাবি প্রশাসন

  রাবি প্রতিনিধি ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৮:২২ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রথম মুক্ত হয় ১৬ জুন। তারপর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যায়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়, প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ ও হাউস টিউটর সহ বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা ৭৬ শিক্ষক পদত্যাগ করেন। অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

পরে ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীবকে নিয়োগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিভিন্ন ইউনিটের নিয়োগ। ধীরে ধীরে উপ-উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র উপদেষ্টা, হল প্রাধ্যক্ষ সহ অধিকাংশ আসনই পূর্ণতা পায়।

তবে শিক্ষার্থীদের চাওয়ার উপর ভিত্তি করে এই প্রশাসন গঠন করা হলেও বিভিন্ন কারণে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন দায়িত্বে এখনো জুলাই বিপ্লববিরোধী শিক্ষকদের অবস্থান। তাছাড়া, নতুন করে তাদেরকে ঢোকানো হচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বে। সংস্কারের কথা মুখে বললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রশাসন নীরব ভূমিকায়। এছাড়াও, বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও রিপোর্ট জমা হচ্ছে না সঠিক ভাবে।

এদিকে, পোষ্যকোটা বাতিল, ফ্যাসিস্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিচারের আওতায় আনা এবং ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন ফি কমানো এই তিন দাবিতে আগামী ২ জানুয়ারি প্রশাসনিক ভবন তালা দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা।

অন্যদিকে, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন শিক্ষক, শিক্ষিকা মিলে অনন্ত ১০ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশই যৌন হয়রানির অভিযোগ। ৪-৫ টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগরের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন একই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন সেনের বিষয়ে দ্রুত তদন্তের দাবিতেও মানববন্ধন করেছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও অন্য শিক্ষকরা হলেন- মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া ও ড. নাজমা আফরোজ, রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অনীক কৃষ্ণ কর্মকার, রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাক মুশতাক আহমেদ, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক নুরুল আমিন ও উর্দু বিভাগের অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান।

এবিষয়ে জানতে চাইলে জনসংযোগ দপ্তরের প্রধান অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, অনেকগুলো বিষয় একসাথে হওয়াতেই একটু সময় লাগছে। আর সঠিক তদন্তের জন্য এই সময়টা নেওয়া। আশা করছি আগামী সিন্ডিকেটে অধ্যাপক ড. সুজন সেন সহ আরও দুই একটা রিপোর্ট আসতে পারে। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত একটি রিপোর্ট সিন্ডিকেটে দেওয়া হয়েছে।

পোষ্যকোটার বিষয়ে রাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন বলেন, সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই বছরের ভর্তি পরীক্ষা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলে একটা সমাধানে দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এবং ভর্তি পরিক্ষা যেন অনিশ্চিত না হয়ে পড়ে। যারা তালা লাগানো কথা বলছে, তাদের সাথেও আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশাকরি একটা সঠিক সমাধানে পৌঁছাতে পারব।

শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, যিনি শিক্ষক সহকারী প্রক্টর হয়েছেন আন্দোলনের বিরুদ্ধে তার অবস্থান থাকলেও অনেকের অনেক রকম চাওয়া থাকে। আমরা বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। আসলে এখন সব একসাথে দেখতে হচ্ছে। আলাদা কোনো বিষয় নেই।