এস এম রাফি ১০ মে ২০২৩ , ৬:৫০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সদরুল আইনঃ
বেগম খালেদা জিয়া ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মান্নার সাথে ফিরোজায় কথা বলেন বেগম খালেদা জিয়া।
জানা গেছে, খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন এবং ধীরে ধীরে দলে এবং দলের বাইরের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলবেন। এমনকি কাদের সাথে কথা বলবেন তার একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই বেগম খালেদা জিয়ার এই তৎপরতা বলে সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে।
যদিও গতকালকের বৈঠকের পর মাহমুদুর রহমান মান্না দাবি করেছেন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের সাথে সমঝোতাকে অসম্ভব বলেছেন। কিন্তু রাজনীতিতে সবকিছুই সম্ভব। বেগম খালেদা জিয়া সরকারের সাথে যে সমঝোতা করছেন তার সদৃশ্যমান প্রমাণ হলো তার রাজনৈতিক তৎপরতা।
বেগম খালেদা জিয়া আস্তে আস্তে রাজিনীতিতে যত সক্রিয় হচ্ছেন বিএনপিতে ততই উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে, কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন তারেক জিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া আসলে আগে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ভার নিতে চাইছেন। ২০১৮ সাল থেকেই বিএনপির রাজনীতির চাবি তার হাতে নেই। এই চাবি কেড়ে নিয়েছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া।
ফলে তারেক জিয়ার নির্দেশে এবং তার সিদ্ধান্তেই দল পরিচালিত হচ্ছে। একারণেই বিএনপির অবস্থা এখন সংকটাপন্ন বলে মনে করছেন খালেদাপন্থিরা। আর এই বাস্তবতা থেকেই বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে স্বক্রিয় হচ্ছেন বিএনপিকে জাগাতে।
বিএনপির মধ্যে যারা খালেদাপন্থি তারা রাজিনীতির হিসাব নিকাশ করছেন। নির্বাচনে না গেলে কি হবে কিংবা নির্বাচনে গেলে কি হবে ইত্যাদি সমীকরণগুলো তারা মেলাচ্ছেন। আর এ ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে নিয়মিত কথা হচ্ছে বিএনপির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতার যারা খালেদা জিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে রাজনীতি করেছেন।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির আরও কিছু নেতার সাথে খালেদা জিয়া পর্যায়ক্রমে কথা বলবেন এবং এ ব্যাপারে সরকারের প্রচ্ছন্ন সম্মতি রয়েছে। শামীম ইস্কান্দার এই বিষয়গুলো তদারকি করছেন।
সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা রুহুল কবির রিজভী, মেজর (অব:) হাফিজউদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে বেগম খালেদা জিয়া ফিরোজায় ডাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া তাদের সাথে কথাবার্তা বলবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কৌশলটি তিন স্তর বিশিষ্ট। প্রথমত, তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে গণমাধ্যম ও জনগণের কাছে আলোচনায় আসবেন এবং বিএনপিতে তার নিয়ন্ত্রণভার গ্রহন করবেন।
দ্বিতীয়ত, দলের আন্দোলন এবং নির্বাচনের যে কৌশল সে কৌশলের ব্যাপারে তিনি তার মতামত দিবেন। এবং তৃতীয়ত, তিনি সরকারের সাথে একটা দর কষাকষি করবেন যেন সরকার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়।
আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার এই কার্যক্রমগুলো চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজিনীতিতে সক্রিয় হওয়ার দৃশ্যমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই তিনি প্রথমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে এবং সবশেষ মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
জানা গেছে, বেগম জিয়া সামনের দিনগুলোতে দলের পাশাপাশি দলের বাইরেও আরও কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এদের মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা কর্ণেল অলি আহমেদ অন্যতম বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে কর্ণেল অলি আহমেদের সঙ্গে বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠরা কেউ কেউ যোগাযোগ করেছেন। যেকোনো সময় কর্ণেল অলির সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আর বেগম জিয়ার এই বৈঠক গুলার মাধ্যমে রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়বেন তারেক জিয়া।
তবে বেগম খালেদা জিয়ার এই সক্রিয় হওয়াটা সরকারের পক্ষে না বিপক্ষে তা নিয়ে বিএনপির মধ্যে বিতর্ক আছে। তবে বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন সরকারের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছাড়া বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ করে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে এভাবে বৈঠক করতে পারেন না।