এস এম রাফি ১৯ মে ২০২৩ , ৫:১৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
চিলমারী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার মধ্যে হরিপুর তিস্তা সেতুর মেল বন্ধনে এই দুই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন শুরু হয়েছে। পাশাপাশি পরিবর্তন এসেছে অর্থনৈতিকভাবেও। সেতু এবং সড়ক পথ চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠতে শুরু করেছে বড় বড় দালানঘর। বেড়ে গেছে রাস্তার ধারের জমির চাহিদা, সাথে বেড়েছে জায়গার দামও। চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতুর কাজ যতই এগোচ্ছে, ততই দুই প্রান্তের মানুষের স্বপ্ন ডানা মেলছে। আগামী বছর জুনের মধ্যে সেতু চালু করার চিন্তা রয়েছে সরকারের। সেতুকে ঘিরে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার মানুষ ব্যক্তিগত নানা প্রকল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। মানুষ সড়কের আশপাশে জমি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। সেতুর দু’পারে সড়কের দুই পাশে এখন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কিনে রাখা জমির সাইনবোর্ড চোখে পড়ে। কেউ কেউ জমি কিনে সীমানাপ্রাচীরও তৈরি করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘ প্রতিক্ষার হরিপুর-তিস্তা সেতু চালু হলেই যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। এক দশক আগেও তিস্তার দু’পার কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সড়কের পাশের ও সড়কের আশপাশের জমি বেশ কম দামে কেনাবেচা হতো। সেই সময়ের তুলনায় এখন জমির দাম ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি।
জানাগেছে, তিস্তা সেতুর দু’পারে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে ৮৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে চিলমারী মাটিকাটা মোড় থেকে সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সেতু পর্যন্ত ৭৭ কিলোমিটার। এর ফলে উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে উভয় জেলার চিত্র। সংযোগ সড়কের পাশে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন সহ দোকান পাট।
গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: জাকির হোসেন বলেন, ‘তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বহু মানুষের বসবাস। এলাকাগুলোও অনুন্নত। শিক্ষার অগ্রগতিও কম। তিস্তার ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে মানুষ। তিস্তা সেতু আজ রঙিন স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
তিস্তা সেতু নির্মাণ দীর্ঘদিনের দাবি ছিল লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলাবাসীর । সেই দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারী গাইবান্ধার শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়ামে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতু প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন। ১৪‘শ ৯০ মিটার দৈঘ্যের এ সেতু প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে। সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, নদী শাসনে ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৬ কোটি টাকা।
সেতুর উভয়পাশে নদী শাসন করা হবে ৩.১৫ কিলোমিটার করে। সেতুর উভয় পাশে সড়ক নির্মাণ করা হবে ৮৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে চিলমারী মাটিকাটা মোড় থেকে সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সেতু পর্যন্ত ৭৭ কিলোমিটার। চিলমারী অংশে একসেস সড়ক সেতু থেকে কাশিম বাজার পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধা ধাপেরহাট থেকে পাঁচপীর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের জুন মাসে সেতুটি খুলে দেয়া হবে।
চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রুকুনুজ্জামান শাহীন বলেন, চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতুকে ঘিরে উভয় পাশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন অনেকে। এর ফলে জমির দামও বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, আন্তঃউপজেলা সংযোগের ক্ষেত্রেও তিস্তা সেতু বড় ভূমিকা রাখবে।