সারাদেশ

পিতা-কন্যা ও জামাতা প্রশাসন ক্যাডারে

  এস এম রাফি ২৩ আগস্ট ২০২৩ , ৪:০৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি চাকরিতে রয়েল পেশা বলা হয়ে থাকে বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসে (এডমিন) নিয়োগপ্রাপ্তদের। এই সার্ভিসের চৌকস আমলারাই প্রশাসনের হেড কোয়ার্টার বাংলাদেশ সচিবালয় নিয়ন্ত্রণ করেন। বিসিএস ক্যাডার পদ ২৮ ধরণের হলেও প্রশাসন সার্ভিসে চাকরি সব প্রার্থীরই থাকে ‘প্রথম চয়েস’।

কিন্তু দূরবীন দিয়ে খুঁজেও এক উপজেলায় একজন বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসের অফিসার পাওয়া যায় না। কিন্তু যখন এক পরিবারে তিনজন বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসে কর্মকর্তার সন্ধান পেলে তা ‘বিরল কৃতিত্বে’র দাবীদার ওই পরিবার ও এলাকার জন্য। কারণ, কালীগঞ্জের কৃতি সন্তান শেখ রফিকুল ইসলাম ১১তম বিএসএসে, তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ রায়হানা ইসলাম ৪১তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত এবং শেখ রায়হানার স্বামী একই জেলার তালা উপজেলার এস. এম মোস্তাফিজুর রহমান ৩৬তম বিএসএসে নিয়োগপ্রাপ্ত।

‘রওশন এরশাদের চেয়ারম্যান ঘোষণা করা বিজ্ঞপ্তি ভুয়া’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসন সার্ভিসের ১১তম ব্যাচে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার শেখ রফিকুল ইসলাম (বিপিএএ)। তার ব্যাচে মেধাক্রমে অবস্থান ছিল দশম। এই কর্মকর্তা মাঠ প্রশাসনসহ বিভিন্ন পদে চাকরি করেছেন দক্ষতা-সুনামের সঙ্গে। বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন আমদানি ও রপ্তানির প্রধান নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত সচিব) হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তার পুরস্কারে ভূষিত হন এবং মন্ত্রিপরিষদের মাঠ-প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব এর দায়িত্ব-ও সফলতার সঙ্গে সামলান। আমদানি রপ্তানির প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে পদায়ন করা হয় চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি থাকার কারণে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করেন।

প্রশাসন সার্ভিসের এই কর্মকর্তার কন্যা শেখ রায়হানা ইসলাম এ বছর ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। সদ্য বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত রায়হানার স্বামী-ও ৩৬তম বিসিএসে প্রশাসন সার্ভিসে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। এস. এম মুস্তাফিজুর রহমান; সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে ঢাকার দোহার উপজেলায় কর্মরত। তার বাড়ী সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বোটানিতে পাস করেন। এই কর্মকর্তার মা শেখ রবিনা ইসলাম একজন সফল গৃহিণী এবং একমাত্র ভাই শেখ রাফিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

কালিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা জানান, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার শেখ রায়হানা ইসলাম এর প্রথম মেধা যাচাই পরীক্ষা ছিল ৪১তম বিবিএস। প্রথম চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পেছনে তার পিতা, পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি স্বামীর অনুপ্রেরণা ছিল। ছোটবেলা থেকেই স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সবক্ষেত্রে মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বীকৃতি অর্জন করেন রায়হানা ইসলাম। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এছাড়াও তিনি ডিনস’ অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট থিথিস অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন। এই মেধাবী শিক্ষার্থী জীবনের প্রথম প্রতিযোগিতামূলক মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (এসএসসি) বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এসএসসির ধারাবাবিকতায় জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য অক্ষুন্ন রাখেন।

শুধু তাই নয়। শেখ রায়হানা ছোটবেলা থেকে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শতাধিক সার্টিফিকেট অর্জন করেন এবং ২০০৯ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত উপস্থিত রচনা প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক পান এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী) দিপু মনির কাছ থেকে তা গ্রহণ করেন।

একই পরিবারে তিন জন প্রশাসন সার্ভিসের কর্মকর্তা হওয়ায় এলাকার আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। প্রশংসায় ভাসছে এই পরিবারটি।