এস এম রাফি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১১:৪৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুতে বৈঠকে বসবেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে কানেকটিভিটি, তিস্তার পানিবণ্টন, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো আলোচনায় অগ্রাধিকার বিষয় হতে পারে। এদিকে, ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ে আরো একটি মাত্রা যুক্ত করবে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে কৃষি খাত, সংস্কৃতি ও টাকা-রুপির বিনিময় বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জি টুয়েন্টি সম্মেলনের দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি ও যুদ্ধের কারণে জরুরি পণ্যের নির্বিঘ্ন সরবরাহ নিয়ে বক্তব্য দেবেন তিনি। সম্মেলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত, সৌদি আরব, আর্জেন্টিনা, আরব আমিরাত, কানাডার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে পারেন।
মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে কিছু জানেন না উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গঙ্গাচুক্তি নিয়ে এরই মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর প্রসঙ্গে আবদুুল মোমেন বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের তাগাদা এবং জ্বালানির কাঁচামাল দ্রুত আসার বিষয়ে আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনে কারো মাতবরি সহ্য করবে না বাংলাদেশ। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাকে স্বাগত জানাচ্ছে সরকার।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দুপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবে। তবে সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে বৃহত্তর সম্পর্কের পুরো ধারাটি আলোচনায় নাও আসতে পারে। দুদেশ একসঙ্গে অনেক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের বাস্তবায়নের সমস্যা আসতে পারে। এছাড়া গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হবে। আমাদের কাছে তিস্তার পানিবণ্টনের ইস্যু আছে, যা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করবেন। আমাদের অন্য সমস্যা আছে। আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সব সময়ই সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা এটাকে সব সময় আলোচনার সূচিতে রাখতাম। এবারও আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলবেন। বাংলাদেশ মনে করে দুদেশের পানিবণ্টন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। কারণ দুদেশ পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কাজ করতে মানসিকভাবে একমত।
এদিকে, বৃহস্পতিবার কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে লিখেছে, হায়দরাবাদ হাউজ অথবা সাউথ ব্লকে নয়, বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে মোদি আলাপচারিতা করবেন নিজের বাসভবন, ৭ লোককল্যাণ মার্গে। আন্তরিকতার বার্তা দিতেই এই গৃহ-অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়েছে বলেও লেখা হয়েছে প্রতিবেদনে।
শনিবার সকাল থেকে শুরু হবে জি২০ দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন। বাংলাদেশ ওই গোষ্ঠীর সদস্য নয়। কিন্তু ভারত জি২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব পাওয়ার পরই মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশকেই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত, যা দুদেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানোর দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়া, আর্জেন্টিনা ও সৌদি আরবের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। নৈশভোজ এবং সম্মেলন কক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার দেখা হওয়ার একটা সম্ভাবনার কথাও লিখেছে আনন্দবাজার।