রাজনীতি

বেগম জিয়া বিদেশ গেলেই বিএনপি’র ‘প্রবাসী সরকার’ গঠনের পরিকল্পনা ভেস্তে দিল আওয়ামী লীগ

  এস এম রাফি ৩ অক্টোবর ২০২৩ , ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আবেদন নাকচ করে দিয়েছে সরকার। যদিও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্যে এটা প্রতীয়মান হচ্ছিল যে সরকার হয়তো শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন শর্তে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেবেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়নি। গতকাল প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকার সাক্ষাৎকারে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য রেখেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশ পাঠাতে হয় তাহলে আগে তাকে আবার কারাগারে যেতে হবে, সেখান থেকে নতুন করে আবেদন করতে হবে। বিষয়টি সরকারের নির্বাহী আদেশের বিষয় নয় বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু দণ্ডিত সেই জন্য আদালতের মাধ্যমেই তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে। যদিও বিএনপির নেতারা এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন।

কিন্তু আইনমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই অনুরণ করেছেন। কিন্তু দুদিন আগেও আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে অন্য সুর ছিল।

তথ্যানুসন্ধান করে জানা গেছে, সরকার একটা পর্যায়ে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে নমনীয় হওয়ার চিন্তাভাবনা করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সরকারের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসে এবং এই তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করে তার সত্যতা পাওয়ার প্রেক্ষিতে সরকারের মধ্য থেকে নমনীয় ভাব চলে গেছে এবং সরকার তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপি এক দফা আন্দোলন করছে এবং এই এক দফা আন্দোলনের অন্যতম শর্ত হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মৃত ইস্যু। এটি সংবিধানের নাই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষে বিএনপি আন্দোলন করছে।

কিন্তু সেই আন্দোলন এখন পর্যন্ত জমিয়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়নি। এই আন্দোলন জমিয়ে তোলার একটা ভিন্ন কৌশল নিয়ছিল বিএনপি। সেই কৌশল গ্রহণের ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধান বাধা।

কারণ বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং সরকারের বিশেষ বিবেচনায় বন্দি এই জন্যই তারা এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। সেই সিদ্ধান্ত ছিল যে, প্রবাসে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রবাসী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা এবং বর্তমান সরকারের ব্যাপারে অনাস্থা আদায় করা।

এটা যদি বিএনপি করতে পারতো তাহলে পরে অনেক দেশই এই প্রবাসী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করতো এবং স্বীকৃতি দিতো। সেই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল বিএনপি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত দুটি লবিস্ট ফার্ম ঠিক করা হয়েছিল। যাদেরকে বলা হয়েছিল যে মুহূর্তে প্রবাসী সরকার গঠিত হবে সেই মুহূর্তে তারা বিভিন্ন সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানদের কাছে দেন দরবার করবেন এবং প্রবাসী সরকারের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য চেষ্টা করবেন।

প্রবাসী সরকারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন এরকম কিছু ব্যক্তি এবং অন্যান্য দেশে বসবাস করেন এরকম কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাখার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছিল। এ নিয়ে সুশীল সমাজের সাথে একাধিক দেন দরবার হয়েছিল বিএনপির।

সূত্র মতে, এই প্রবাসী সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে এবং সেই নির্বাচন যদি করা যায় তাহলে পরে এটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে। তখন বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধিরা এরকম বিবৃতি দেবেন যে, এই প্রবাসী সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক।

অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে এই প্রবাসী তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক এরকম একটি আবহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তৈরি করা হবে। তখন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা এবং আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে।

এরকম একটি পরিকল্পনার থেকেই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার কথা বারবার বলা হচ্ছিল। আর সে কারণেই বিএনপির আন্দোলন থমকে গিয়েছিল। এরকম একটি প্রবাসী সরকার গঠন হলে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়তো এবং সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সৃষ্টি।হত।

এটি সরকার চায় নি। আর এই কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে সরকার শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়েছে যেখানে আইনগত ইস্যুটিকে সরকার সামনে নিয়ে এসেছে এবং আইনগত ইস্যুতে একজন দণ্ডিত ব্যক্তির বিদেশ যাওয়ার উপায় নাই। এটিও স্বতঃসিদ্ধ সত্য একটি বক্তব্য।

যার ফলে সরকার তার অবস্থানে যেমন অনড় থেকেছে, তেমনি বিএনপির যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে।