এস এম রাফি ৫ অক্টোবর ২০২৩ , ৮:৫৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে এখন সারাদেশের জরিপ রিপোর্ট এবং চূড়ান্ত মনোনয়নের খসড়া রয়েছে। যারা মনোনয়ন পাবেন তাদেরকে তিনি সবুজ সংকেত দেওয়ার শুরু করবেন কয়েকদিনের মধ্যেই।
তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে আওয়ামী লীগ সভাপতি দুই ধরনের মনোনয়ন প্রস্তুত করে রেখেছেন। এটি মোটামুটি চূড়ান্ত। একটি মনোনয়ন হলো যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে একরকম মনোনয়ন।
আর যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে অন্য রকমের মনোনয়ন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সারা দেশে আওয়ামী লীগ গত দুই বছরে ৬টি জরিপ পরিচালনা করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা, আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনে আসন ভিত্তিক জরিপ পরিচালনা করেছে।
এই সমস্ত জরিপে যারা এগিয়ে আছে তাদেরকে নিয়ে তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলেছে যে, এই তালিকা চূড়ান্ত নয় তালিকার বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার নিজস্ব উদ্যোগে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এই সমস্ত জরিপের তথ্যের সঙ্গে তার নিজের তথ্যগুলো তিনি মিলিয়ে দেখবেন।
সূত্রগুলো বলছে, যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে প্রথম বিকল্পে যাবে আওয়ামী। প্রথম বিকল্প হলো, যেখানে জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছে সেই জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া। সেই জনপ্রিয় প্রার্থী যদি নতুন হয় বা পুরোনো হয় তাতে কোনো সমস্যা নেই। তার জয়ের সম্ভাবনাটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রায় দেড়শো আসনের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে এরকম মনোনয়নের ক্ষেত্রে যারা সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না কিন্তু এলাকায় জনপ্রিয়, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সাবেক আমলা, ক্রীড়াবিদ এমন ব্যক্তিরাও মনোনয়ন পেতে পারেন।
এলাকায় যাদের প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে এবং এলাকায় আলাদা সুনাম রয়েছে তাদেরকে এই মনোনয়নে আওয়ামী লীগের শিবিরে নিয়ে আসা হবে। এরকম একটি মনোনয়ন করা হবে বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এইরকম মনোনয়নের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তাকে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যারা বিতর্কিত, যারা এলাকায় যান না, যাদের জনপ্রিয়তায় ধস রয়েছে,যারা রাজনীতির আড়ালে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে এলাকায় অভিযুক্ত, এরকম ব্যক্তিরা ওই মনোনয়ন তালিকায় কোনো অবস্থাতেই মনোনয়ন পাবেন না।
সেখানে যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন তাদের অতীত ভূমিকাও খুব একটা দেখা হবে না বরং তিনি নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন কিনা সেটি দেখা হবে।
সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ মোটামুটি ২০০ আসনে জয়ী হওয়ার লক্ষে মনোনয়ন তালিকা করেছে। যেখানে ২০০ আসনে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। জনপ্রিয়তা,নির্লোভ চরিত্র ও বদনামহীন ব্যক্তিদের একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
অপরদিকে, দ্বিতীয় বিকল্প মনোনয়ন তালিকাটি সম্পূর্ণ হবে শেখ হাসিনার ইচ্ছার উপর। যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে আওয়ামী লীগের অবধারিত বিজয় সুনিশ্চিত। আর এই কারণে আওয়ামী লীগ তখন দলে যারা দীর্ঘদিনের ত্যাগী পরীক্ষিত, তাদেরকে মনোনয়নের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসবেন।
দলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অবদান রেখেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কিছুই পাননি, যারা ৭৫’এ কিংবা ৮০’র দশকের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অথবা এক-এগারোর সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যারা তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন, যারা দলের জন্য বিভিন্ন সময় নানারকম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, এই সমস্ত ব্যক্তিদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
তাদের জনপ্রিয়তা কম থাকলেও তাদেরকে সামনে নিয়ে আসা হবে কারণ এই সমস্ত ব্যক্তিরা দলের জন্য, দেশের জন্য যে অবদান রেখেছেন, তাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান মনোনয়নের ৫০ থেকে ৭০ সর্বোচ্চ ১০০ আসনে পরিবর্তন হতে পারে। একটু কম জনপ্রিয়, একটু বিতর্কিত কিন্তু দলের জন্য অতীত অবদান আছে সেই ক্ষেত্রে তাদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।
আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত মনোনয়নের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিচ্ছে না কারণ আওয়ামী লীগ দেখতে চাইছে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল কি, বিএনপির কৌশল দেখেই আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।