এস এম রাফি ১২ অক্টোবর ২০২৩ , ৫:৫৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
গ্রাম বাংলার চির চেনা রূপ কৃষকেরা লাঙ্গল-জোয়াল-মই কাঁধে নিয়ে কাক ডাকা ভোরে হালুয়া (চাষি) কে গরু মহিষ হাল নিয়ে জমি চাষের জন্য মাঠে যেত। সেই চিরচেনা দৃশ্য কাউনিয়ার গ্রাম-গঞ্জে এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। একসময়ের শ্বাশত গ্রাম বাংলায় জমি চাষের একটি চিরায়ত পদ্ধতি ছিলো গরু-মহিষ হাল। হঃ হঃ-ডাইন-ডাইন বাও-বাও বলে কৃষক গরু তারিয়ে নিতেও দেখা যায় না। লাঙ্গল ও জোয়াল গরু মহিষের কাধে লাগিয়ে চাষি জমি চাষ করতো। কালের আবর্তনে যান্ত্রিক আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যটি। সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখাগেছে, লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ এখন আর চোখে পড়ে না। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির আগমনে দিন দিন হারিয়ে গেছে এই চিরচেনা গ্রামের লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষের দৃশ্যটি। এটি ছিলো অনেক উপকারী এক পদ্ধতি। লাঙ্গলের ফলা জমির অনেক গভীর অংশ পর্যন্ত আলগা করতো। গরুর পায়ের কারণে জমিতে কাদা হতো অনেক এবং গরুর গোবর জমিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি অনেক বৃদ্ধি করতো। আগে দেখা যেত কাক ডাকা ভোরে গরু, মহিষ, লাঙ্গল, জোয়াল নিয়ে কৃষক ভাওয়াইয়া, জারি, সারি গান গাইতে গাইতে মাঠে বেরিয়ে পরতো। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে কৃষক গরু, মহিষ পালন করত হালচাষ করার জন্য। অনেকে হালচাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন। এখন আর সে দৃশ্য চোখে পড়ে না আর গানও শোনা যায় না। এখন জমি চাষের প্রয়োজন হলেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চালছে জমি চাষ। বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের ফলে কৃষিতে এসেছে নানা পরিবর্তন। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদল করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরু, মহিষ, লাঙ্গল, জোয়াল দিয়ে জমিতে হাল চাষ। কাউনিয়ার গদাই গ্রামের কৃষক গফুর আলী মন্ডল বলেন, ‘ছোটবেলায় হালচাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হালচাষের বলদ গরু ছিল ২-৩ জোড়া। চাষের জন্য দরকার হতো এক জোড়া বলদ, কাঠের তৈরি লাঙ্গল, বাঁশের তৈরি জোয়াল, মই, লরি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোপা ইত্যাদি। বাড়িতে পান্তা ভাত মরিচ পিয়াজ আর সরিষার তেল দিয়ে মেখে খেয়ে বেড়িয়ে পড়তাম লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে দিয়ে জমি চাষ করতে। এখন আধুনিক বিভিন্ন মেশিন এসেছে, সেই মেশিন দিয়ে লোকজন জমি চাষাবাদ করে। তাই গরু, মহিষ, লাঙ্গল, জোয়াল নিয়ে জমিতে হাল চাষ নেই বললেই চলে। দু একজন যারা এখনও ধরে রেখেছে তারাও উচ্চ মূল্যে গো-খাদ্য কিনতে না পেরে গরু-মহিষ বিক্রয় করে দিচ্ছে। এখন যে দু’একটি গরু-মহিষের হাল চোখে পড়ে তারা জমি চাষের চেয়ে মই দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকে এবং যাদের অল্প-সল্প জমি রয়েছে তারাই শুধু হাল দিয়ে চাষ করে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীন জানান জৈব সারের চাহিদা পূরনে গরু-মহিষের হালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। অনেকে মন্তব্য করে বলেছেন কবি নজরুলের পত্রিকা ‘লাঙ্গল’ যেমন হারিয়ে গেছে তেমনি আর কিছু দিন পর আমাদের নতুন প্রজন্মকে লাঙ্গল জোয়াল চেনাতে নিয়ে যেতে হবে যাদু ঘরে। কারন বিলুপ্ত জিনিষই যাদু ঘরে স্থান পায়।