শিক্ষা

চিলমারীতে আ. লীগ নেতার দাপটে স্কুলের জায়গা নির্ধারণে বাঁধা,কার্যক্রম স্থবির ৪ মাস ধরে

  এস এম রাফি, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি: ১২ নভেম্বর ২০২৪ , ৯:৩৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

ভাঙনের পূর্বে শাখাহাতী ১নং সরকারি প্রা:বিদ্যালয়ের ছবি

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সম্প্রতি বন্যায় চর শাখাহাতী ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জায়গা নির্ধারন করা হলেও স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাব ও ক্ষমতা দেখিয়ে অপর একটি স্থানে স্কুলটি সরিয়ে নেয়ার পায়তারা করছেন। ফলে দুটি পক্ষের মানা না মানা নিয়ে গেলো ৪ মাস ধরে স্কুলটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী এলাকায় স্কুলটির অবস্থান। প্রতিষ্ঠানে ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু জায়গা নির্বাচন করা নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বে এখনো স্কুলে পাঠদান সমস্যা দেখা দিয়েছে । এতে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।শিক্ষা অফিস বলছে, দ্রুত উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের জুন মাসে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনের কারনে চর শাখাহাতী ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ টি টিন সেট ঘর পাশ্ববর্তী শাখাহাতী আরডিআরএস গ্রামে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ওই ইউনিয়নের শাখাহাতী গ্রামের বাসিন্দারা আরডিআরএস গ্রামে স্কুল স্থাপনের জন্য জায়গা নির্বাচন ও দুই লাখ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করেছেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে স্কুল স্থাপনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন স্বজনরা।

স্থানীয়রা বলছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গওছল হক, তার ভাই জহুরুল ইসলাম (ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা) এবং  ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান যোগসাজশে স্কুলটি তাদের পছন্দের জায়গায় করার পায়তারা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন করে স্কুলের স্থান নির্ধারন করতে গিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ৩০ বছর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আসছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি গয়ছল হক। তিনি এসএমসি কমিটিতে কখনো নিজে সভাপতি আবার কখনো স্ত্রী কে সভাপতি বানিয়ে স্কুলে নামে বরাদ্দকৃত অর্থসহ নানা সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন।

নতুন নীতিমালায় সভাপতি হতে হলে লাগবে স্নাতক পাস। আইনের ধারা অনুযায়ী লেখা পড়া না জানা গয়ছল হক ধরা খেয়ে যান। তাই নিজে সভাপতি না হয়ে মামাতো ভাই মশিউর রহমানকে অবৈধভাবে সভাপতি বানান।

এ নিয়ে এলাকাবাসীর আপত্তি থাকলেও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ডিও লেটার দেখিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান কে সভাপতি পদে এবং নিজের মেয়ে শরিফা আক্তারকে এসএমসির সদস্য পদে সিলেকশন করেন এই আ.লীগ নেতা।

২০২০ সাল হতে মশিউর রহমান, তার স্ত্রী ও ৩ বছরের শিশু বাচ্চাসহ উলিপুরে বসবাস করছেন। সেখানে তিনি গুনাইগাছ কমিটির ক্লিনিকের সিএইচসিপি হিসেবে চাকরি করা অবস্থায় ২ বছর ধরে ছিলেন স্কুল কমিটির সভাপতি।

এনিয়ে স্কুলটির সাবেক সভাপতি  ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, আমি উলিপুরে চাকরি করি স্কুলের বিষয়ে কিছু জানিনা। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ এই মউিউর রহমান হচ্ছেন নাটেরগুরু!তিনি এলাকা বলে বেড়াচ্ছেন আমি প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ৪ লক্ষ খরচ করেছি,স্কুল আমার পছন্দের স্থানেই হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুজা মিয়া বলেন,টিও এটিও স্যাররা আসছিলো ওনারা জায়গা নিধারন করে গেছেন আমরা সে মোতাবেক জমিতে  মাটি ফেলেছি প্রায় দুই লক্ষ টাকা দিয়ে, আমরা চাই শাখাহাতিতে যেন স্কুল হয়। তা না হলে অন্য খানে হলে ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলে যেতে কষ্ট হবে। স্কুল নিয়ে চিলমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গয়ছল হক , তার ভাই জহুরুল ইসলাম এবং মশিউর রহমান মিলে তাদের এলাকায় স্কুলটি নিয়ে যাওয়ার জন্য পায়তারা করছেন। এতো দিন স্কুলটির কমিটিতে থাকায় লেখা পড়ার মান ভালো করতে পারেনি শুধু দুনীতি করেছেন।

স্থানীয় এই আওয়ামী লীগ নেতা নিজের আত্মীয় স্বজনদের কমিটিতে রেখে দপ্তরী কাম প্রহরী পদে বোনের ছেলে মিলন মিয়াকে দিয়েছেন নিয়োগ। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হয়ে যাওয়া প্রতিটি নির্বাচনে এই স্কুলটি ভোট সেন্টার হিসাবে ব্যবহার করে ৬০% ভোট কাস্ট দেখিয়েছেন! এমনকি মৃত্যু ব্যক্তিকেও ভোট দিতে দেখা যায় এই ভোট কেন্দ্রে। ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জোর করে ভোট চুরি করে হয়েছিলেন চেয়ারম্যান।

এবিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান গয়ছল হক মন্ডল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এখানে জড়িত নই। স্থানীয়রাই ভাল জানেন।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ইউএনও স্যারকে বার বার বলছি, তারা এসেছিলেন। কিন্তু কেন তারা সিন্ধান্ত নিতে পারেছেন না আমার জানা নেই। এভাবে চলতে থাকলে বাচ্চাদের লেখাপড়া বিঘ্ন হবে।

উপজেলা প্রাথমিক  শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. জাহিদুর রহমান বলেন, এলাকার মানুষ দুই স্থানে স্কুল চাওয়ায় আমরা খুব সমস্যায় পড়েছি  ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হবে। আমি স্থানীয়দেরকে বলবো তারা যেন উভয় পক্ষ বসে সমাধান করলে ভালো হয়। এভাবে স্কুল চললে ছাত্র ছাত্রীদের লেখা পড়া বিঘ্ন ঘটতে পারে।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নঈম উদ্দীন জানান, সরেজমিনে গেছিলাম। নদীভাঙন এলাকা হওয়ায় জায়গা নির্ধারণের কাজ চলছে।