এস এম রাফি ৩ অক্টোবর ২০২৩ , ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে রাজনীতি অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনা, আলাপ-আলোচনা চলছে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তাও রয়েছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তিন ভাবে এই নির্বাচন হতে পারে। এই তিন রকম নির্বাচনে তিন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে। তিনি বিভিন্ন দলীয় বৈঠকে, ঘরোয়া আলোচনাতে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এবারের নির্বাচনে কোনো রকম কারচুপি করা যাবে না।
এটি তার জাতির কাছে কমিটমেন্ট (অঙ্গিকার)। কাজেই নির্বাচন যে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে সেটি বলাই বাহুল্য।
আর সেই নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ করে পশ্চিমা দেশগুলোর অনুরোধে বা রাজনৈতিক সমঝোতার কারনে তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সব ধরনের সংকট থেকে মুক্তি পাবে। স
সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন হবে না, বিতর্ক হবে না।
বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন যে ২০১৪ বা ২০১৮’র মতো হবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এরকম নির্বাচন হলে নির্বাচনে যারাই জিতুক না কেন সেই সরকার আন্তর্জাতিকভাবে সহজে স্বীকৃতি পাবে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় এটি হবে একটি নতুন মাইল ফলক।
কিন্তু এভাবে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারপরও কথা থাকে, যদি শেষ পর্যন্ত অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনও হয় সেই নির্বাচন কতটুকু মেনে নেবেন যারা পরাজিত হবেন তারা।
নির্বাচনের পরে কারচুপির অভিযোগ বা অন্যান্য অভিযোগ আনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি চিরায়ত রীতি। সেই রীতি পাশ কাটিয়ে এই ধরনের নির্বাচনকে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশে আদৌ চালু হবে কিনা তা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।
বিএনপি নির্বাচন প্রশ্নে ভেঙে যেতে পারে। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তি-চিকিৎসা প্রশ্নেও বিএনপির মধ্যে সংকট দেখা দিতে পারে।
তাছাড়া তৃণমূল বিএনপি বিএনপির জন্য একটা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে বিএনপির একটি অংশ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে পারে এমন একটি আলোচনা সর্বত্রই রয়েছে। বিএনপির মধ্যেও এই আলোচনা রয়েছে।
বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন, বিএনপিকে ভাঙার চক্রান্ত চলছে এবং বিএনপির মধ্যে মীরজাফর তৈরি করা হচ্ছে। এরকম আংশিক বিএনপির অংশগ্রহণে যদি নির্বাচন হয় সেই নির্বাচন যদি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় তাহলে পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই কম হবে বা শেষ পর্যন্ত তারা এই নির্বাচনকে মন্দের ভালো হিসেবে গ্রহণ করবে।
নির্ভর করছে সেই নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকায় কি হয়, নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় এবং এ ধরনের নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কেমন হয়। সবকিছু মিলিয়ে এ ধরনের একটি নির্বাচন মন্দের ভালো।
এই ধরনের নির্বাচনের পর শেষ পর্যন্ত হয়তো সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তেমন কোনো সংকট দেখা দেবে না।
এমন একটি সম্ভাবনাও রয়েছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ করলো না, বিএনপির খন্ডিত অংশও অংশগ্রহণ করলো না সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে যে সমস্ত দল নির্বাচনে যাবে তাদেরকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে।
এই ধরনের নির্বাচনের করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনে যেন ভোটার উপস্থিতি ৫০ ভাগ বা তার বেশি থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে হবে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করতে হবে। তারপরও এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা তা অনিশ্চিত।
শেষ পর্যন্ত এই ধরনের নির্বাচন যদি হয় তাহলে নির্বাচনের পরে সরকারকে আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং গ্রহণযোগ্যতা আদায়ের জন্য চেষ্টা করতে হবে।