রাবি প্রতিনিধি ৫ মার্চ ২০২৪ , ৬:৩৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
বয়স তখন সাত কি আট। সময়টা ২০১১ সাল তখন তিনি তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী । একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে ট্রেন লাইন পার হওয়ার সময় দূর্ঘটনার শিকার হয়ে হারিয়েছেন দুই পা। ট্রেন দূর্ঘটনায় পা হারালেও জীবনযুদ্ধে হারতে নারাজ তিনি। বলছিলাম ঢাকার খিলগাও থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ‘সি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তিচ্ছু মো. আসিফের কথা।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) রাবির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে বিজ্ঞান শাখার বিভিন্ন বিভাগ অন্তর্গত ‘সি’ ইউনিটের গ্রুপ-২ এর ভর্তি পরীক্ষায় হুইল চেয়ারে করে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় তাকে।
কথা বলে জানা যায়, আসিফ মনিপুর স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তারা দুই ভাই এক বোন। তিনি সবার বড়। তিনি যখন তৃতীয় শ্রেনীতে পড়াশোনা করতেন, তখন একদিন বাড়ি থেকে দাদার সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার পথে দৌড়ে রেল লাইন পার হওয়ার সময় ট্রেন দূর্ঘটনার স্বীকার হন । সেই দূর্ঘটনায় জীবন না গেলেও তিনি হারান নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পা। তার পর শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন।জীবনে আসে নানা বাধা -বিপত্তি।
আসিফ জানায়, দুটি পায়ের শূণ্যতা স্বাভাবিক মানুষের ন্যায় জীবন জাপনের বাধা সৃষ্টি করলেও তার জীবনের উদ্দেশ্যেকে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বরং এটি তাকে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য উদ্যোমী করে তুলেছে। এই এই সমস্যাটা তাকে বার বার কঠোর পরিশ্রম করার জন্য তাগিদ দেয়। তিনি আরো বলেন, ভর্তি পরিক্ষা দিতে এসে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।তিনি জানান বিশ্ববিদ্যালয় টয়লেট গুলো এবং একাডেমির ভবনের সিড়িগুলো তাদের মতো শারীরিক প্রতিবন্ধিদের জন্য প্রতিবন্ধী বান্ধব নয়। তিনি স্কুল কলেজ থেকে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসছে।কিন্তু এই সকল সমস্যার কারনে তিনি থেমে থাকেনি।উদ্যোমী হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন এবং স্কুল -কলেজ থেকে সকল জায়গায় তিনি ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। আর তিনি নিজের বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন এই অবস্থানে আসার পিছনে আমার বাবা-মার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। যা বলার মতো নয়। বাবা-মা যদি সাহায্য না করতো তাহলে আমার মনে হয় নাহ এতদুর আমি আসতে পারতাম। তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে কখনো ঠাট্টা তামাশা করেনি বরং তাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছে।
ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আসিফ বলেন, ভর্তি পরীক্ষা ভালো হয়েছে। এছাড়াও ঢাবি, জাবি এবং চবিতে পরীক্ষা দিয়েছি। যেকোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা। ক্যারিয়ার গড়তে জাপানে যাওয়ার ইচ্ছাও রয়েছে বলে জানান তিনি।