স্টাফ রিপোর্টার: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৫:২৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার :
বিদায়ী নভেম্বর মাসে দেশে ৪১৫ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯৭ জন নিহত, ৭৪৭ জন আহতের তথ্য পাওয়া গেছে। এই মাসে রেলপথে ৬৪ টি দুর্ঘটনায় ৭৯ জন নিহত, ৪৩ জন আহত হয়েছে। নৌ পথে ০৭ টি দুর্ঘটনায় ০৬ জন নিহত, ২৯ জন আহত এবং ০২ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪৮৬ টি দুর্ঘটনায় ৫৮২ জন নিহত এবং ৮১৯ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ১৬৭ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯২ জন নিহত, ১১১ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৪০.২৪ শতাংশ, নিহতের ৩৮.৬৩ শতাংশ ও আহতের ১৪.৮৬ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে, ১০৬ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২৯ জন নিহত ও ২৬৪ জন আহত হয়েছে, সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে, ২৬ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৪৫ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আজ ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন তুলে ধরে সংগঠনটি। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৫ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ২৫৩ জন চালক, ১১৬ জন পথচারী, ১১৮ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৭ জন শিক্ষার্থী, ১৫ জন শিক্ষক, ৬৭ জন নারী, ৩৫ জন শিশু, সাংবাদিক ০৭ জন, ০১ জন চিকিৎসক, ১০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং ০২ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে- ০২ সেনাবাহিনীর সদস্য, ১৬৭ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ১০৫ জন পথচারী, ৫৫ জন নারী, ২৭ জন শিশু, ৪৫ জন শিক্ষার্থী, ২১ জন পরিবহন শ্রমিক, ১৩ জন শিক্ষক, ০১ জন চিকিৎসক, ০২ জন সাংবাদিক, ০২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৫৮৮ টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ৩০.১০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.১০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬.১৫ শতাংশ বাস, ২০.৫৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৩.৭৪ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৩.০৬ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৪.২৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫০.১২ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২১.৬৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮.৩১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৯.১৬ শতাংশ বিবিধ কারনে, ০.৭২ শতাংশ ট্রেন যাববাহনে সংঘর্ষ।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩০.৮৪ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪০.২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২২.৮৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৮৬ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে ও ১.৪৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ০.৭২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ :
১. দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতি সুযোগে আইন লংঘন করে যানবাহনের অবাধ চলাচল।
২. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় এবং অতি কুয়াশার কারনে ও বড় বড় সৃষ্টি হওয়ায় এসব গর্তের কারনে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে।
৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টানিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকের এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।
৪. মহাসড়কের নির্মান ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৫. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।
৬. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহনহ চালানো।
৭. জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে অবাধে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ :
১. জরুরী ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মত ছোট ছোট যানবাহন আমদানী ও নিবন্ধন বন্ধ করা ।
২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহন, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান।
৪. ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘন্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা।
৭. সড়ক পরিবহন আইন যথাযতভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা।
৮. উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।
১০. মেয়াদোর্ত্তীন গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।