প্রযুক্তি

ফুলবাড়িতে স্কুল ছাত্রের তৈরি উড়োজাহাজ আকাশে পাখা মেলেই সবাইকে তাকে লাগিয়ে দিল

  উত্তম কুমার মোহন্ত, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি: ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৪:২১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

ইউটিউব দেখে দীর্ঘ ৯ মাস প্রচেষ্টার পর বাবা মায়ের দেওয়া টিফিনের টাকা জমিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাংলাদেশ বিমানের আদলে ককশিট কিনে উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়া হাবিবপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্কুল পড়ুয়া ছেলে শামীম রানা (১৫)।

রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত উড়োজাহাজ টিকে প্রায় ১৫ মিনিট আকাশে উড়িয়েছেন শামীম। এঘটনার পর থেকে উড়োজাহাজের সঙ্গে ওই কিশোরকে দেখতে প্রতিনিয়ত ভীড় করছেন উৎসুক মানুষ।শামীম রানা উপজেলার স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ফুলবাড়ী জছিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষার্থী।বাবা শহিদুল ইসলাম একজন কৃষক মা সুমি বেগম গৃহিণী,দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড় শামীম।

শামীম রানা জানান,ছোট বেলায় আকাশে উড়োজাহাজ উড়তে দেখে,তখন থেকে আমার স্বপ্ন কোন একদিন আমি নিজেই উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়াবো। প্রথমে কলার ছাল, কাগজ দিয়ে উড়োজাহাজ তৈরি করতাম এখন পূর্ণাঙ্গ একটি উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়াতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। আমার তৈরি করা অচিন পাখি নামের উড়োজাহাজটি ওজন ১ কেজি ৩ গ্রাম,দৈর্ঘ্যে ৫৬ ইঞ্চি, উচ্চতা ও প্রস্থে সাড়ে ৮ ইঞ্চি,৬টি চাকা বিশিষ্ট, উড়োজাহাজ টিতে ২২ শত কেভি দুইটি ব্রাশলেস ডিসি মটর ব্যবহার করা হয়েছে। ইন্টারনেট ঘেঁটে প্রথমবার ককশিট দিয়ে উড়োজাহাজের আদল তৈরি করেন। রিচার্জেবল লিপো ব্যাটারির শক্তিতে চালিত উড়োজাহাজটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে গতি উঠানামা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।আমি এটা তৈরি করতে পেরে খুব আনন্দিত, আমার স্বপ্ন ভবিষ্যতে ইন্জিনিয়ার হওয়ার।

শামীমের বাবা শহিদুল ইসলাম ও মা সুমি বেগম জানান, ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি কাগজ দিয়ে উড়োজাহাজ তৈরি করত। অযাথা সময় নষ্ট না করার জন্য আমরা মাঝে মাঝে বকাও দিতাম,কিন্তূ কোন বাঁধা না মেনে ও গুলো তৈরি করত। তাকে দেওয়া প্রতিদিনের স্কুল টিফিনের টাকা না খেয়ে  জমিয়েছে কিছু আর আমাদের কাছে বায়না ধরেছে কিছু টাকা দাও ছেলের জেদের কারণে অনেক কষ্টে করে কিছু টাকা দেই সেই টাকা টিফিনের টাকা সহ উড়োজাহাজ তৈরির খুচরা যন্ত্রাংশ অনলাইনে কিনে উড়োজাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এখন আমাদের ছেলের তৈরি উড়োজাহাজ দেখতে প্রতিনিয়ত অনেক লোকজন আসছেন, কেউ যদি ছেলের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত,তাহলে তার বড় স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

উড়োজাহাজ দেখতে আসা আমিনুল ইসলাম ব্যাপারী, আজাহার আলী, জাহাঙ্গীর আলম, বলেন, ছেলেটির অসাধারণ প্রতিভা,আমাদের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে উড়োজাহাজ তৈরি করবে স্কুল পড়ুয়া একটি ছেলে এটা অবিশ্বাস্য সেটা আকাশে উড়বে ভাবতে পারিনি বাস্তবে দেখে আশ্চর্য হয়েছি, সরকার ছেলেটিকে সহযোগিতা করলে ভবিষ্যতে ছেলেটি আরও ভালো কিছু করতে পারে। আমরা তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল কামনা করছি।

ফুলবাড়ী জছিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন,আমাদের বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শামীম রানা তার এই উদ্ভাবনকে আমরা সাধুবাদ জানাই, শামীম কে দেখে অনেক ছাত্র ছাত্রী তাদের তাদের প্রতিভা বিকাশের প্রচেষ্টা চালাবে, সেই সঙ্গে শামীমকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা আহ্বান জানাচ্ছি

 তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের ফুলবাড়ী উপজেলা আইসিটির কর্মকর্তা আজমল আবসার জানান,বিভিন্ন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শামীম রানা যে উড়োজাহাজটি তৈরি করেছে সেটির জন্য তাকে সাধুবাদ জানাই, সেইসঙ্গে শামীম রানা কে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করছি।