উত্তম কুমার মোহন্ত ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি: ২১ জুন ২০২৫ , ৫:৩৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বারোমাসিয়া নদীর উপরে বাঁশের সাঁকো টি ভেঙ্গে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে নদীর দুধারের হাজারো মানুষ। নদী পারাপারের একমাত্র সাঁকোটি ভেঙ্গে পরায় নদী কুলের দুই পাড়ের হাজারো মানুষজন নদী সাঁতরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হচ্ছেন। বিশেষ করে নদী সাঁতরে পারাপারের চরম ঝুঁকিতে নারী,শিশু,বৃদ্ধ সহ-শিক্ষার্থীরা।এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে ভাঙ্গা বাঁশের সাঁকোটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারে দ্রুত দাবি জানিয়েছেন নদীর দুই পাড়ের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে উপজেলার নাও ডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ি এলাকায় এক সময়ের আমিন মেম্বারের ঘাট নামে পরিচিত বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীর উপরে নির্মিত ২২০ ফিট লম্বা বাঁশের সাঁকো টির দক্ষিণ দিকে ৫০ থেকে ৬০ ফিট দৈর্ঘ্য সাঁকোর অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যাওয়ায় পারাপারের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এসময় কয়েকজন নারী,পুরুষ শিশুকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে এক বুক পানিতে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে আবার কাউকে সাঁতরিয়ে পারাপারের দৃশ্য দেখা গেছে।
নদীর দুই পাড়ের লোকজনের সাথে কথা বললে প্রতিবেদকে জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে বারোমাসিয়া নদীটি পাড়ি দিয়েছেন ছোট ছোট ডিঙ্গি ও মাঝারি নৌকা দিয়ে। তখনকার সময়ে নদীর এই ঘাটটি সরকারের কাছ থেকে ইজারাদারা ডেকে নিয়ে পারাপার করাতেন। সেই সময়ের প্রথম ইজারাদার ছিলেন,করিম উদ্দিন করিমের ঘাট নামে পরিচিত তারপর নবিউলের সর্বশেষ ইজারাদার আমিন মেম্বারের ঘাট হিসেবে পরিচিত তাদের মাধ্যমে এভাবে দীর্ঘসময় পাড়া পার হতেন দুই পাড়ের বাসিন্দারা।এরপর আস্তে আস্তে একসময় বারোমাসিয়া নদীর আকার ছোট হয়ে আসায় দুই পাড়ের বাসিন্দাদের যৌথ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। সেই সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত টানা প্রায় ১০ বছর বাঁশের এই সাঁকো দিয়ে দুই পাড়ের হাজারো মানুষ পারাপার হয়ে আসছেন।
অবশ্য প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগেই স্থানীয়রা বাঁশের এই সাঁকো টির মেরামত করে থাকেন যাতে বর্ষার সময়েও সাঁকো পারাপারের কোন অসুবিধা না হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবছর সংস্কারের প্রস্তুতিও নেয় এরেই মধ্যেই ১৫ থেকে ২০ দিন আগে সাঁকোর নিচের বাঁশের খুঁটি গুলোতে অসংখ্য কচুরিপানা জমে যায় এমতাবস্থায় হঠাৎ নদীর তীব্র স্রোতে পুরোনো নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো টি ভেঙে যায়। এরপর থেকে দুই পাড়ের মানুষের নদী পারাপারের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রায় এক মাস থেকে নাও ডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ি, চরগোড়ক মন্ডল,ঝাউকুটি পশ্চিম ফুলমতি, পাশ্ববর্তী শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের হকবাজার, এবং পাশের লালমনিরহাট জেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চর খারুয়া সহ ছোট বড় আট গ্রামের হাজারো মানুষ নদী পারাপারের চরম বিপাকে পড়েছেন।
এব্যাপারে কিশামত শিমুলবাড়ি এলাকার, তাহের আলী ও ঝাউকুটি এলাকার নুর ইসলাম জানান, এখানে বলার ভাষা নাই। বাঁশের এই সাঁকো টি ভেঙে যাওয়ার প্রায় এক মাস হয়ে গেল এখন পর্যন্ত ভাঙ্গা সাঁকো টি মেরামতের জন্য সরকার তো দুরের কথা স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররাও কোন উদ্যোগ নেয় নাই। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক বুক পানি ভাঙ্গিয়ে বাইসাইকেল কাঁদে নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছি। আমাদের এই দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই বলে ক্ষোভ জানান।
স্থানীয় মর্জিনা বেগম ও জাহানারা বেগম বলেন, কি আর কমু বাহে তোমরা তো দেখতেছেন। হামরা গরিব মানুষ জালালির কাজে ব্যবরিত খড়ি লাকড়ি জোগাড়ের জন্য এক বুক পানি ভাঙ্গিয়ে নদী পাড় হয়ে চড়ে যাই সেখানে শুকনো ভুট্টার গাছ খড়ি লাকড়ি জোগাড় করে বোঝা বেঁধে মাথায় নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবার এক বুক পানি ভাঙ্গিয়ে ঘরে ফিরে আসি বাহে ।আর তোমরা খালি হামার ছবি তোলেন। আজ এক মাস থাকি এত কষ্ট করি পারাপার হচ্ছি কেউ একনা খোঁজ খবর নিতে আসলো না বাহে। তাঁরা আরও জানান,এইযে এখন স্কুল বন্ধ আর কয়েকদিন পরে স্কুল খুলবে আমাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলো কি ভাবে স্কুলে যাবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী সাঁতরে স্কুল যাওয়া আশায় জীবন বিপন্নের আশংকা করি।তাই আমরা স্কুল খোলার আগে সাঁকো টির মেরামতের জোর দাবি জানাচ্ছি।
চর খারুয়া এলাকার শিক্ষার্থী জুয়েল রানা,সুইটি খাতুন,ঝাউকুটি এলাকার রবিউল ইসলাম ময়না খাতুন, আলমগীর হোসেন জানান, এখন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় আমরা পারাপার কম হচ্ছি তারপরও মাঝে মধ্যে অন্যান্য কাজের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী সাতড়িয়ে পার হতে হয়। আমরা ছোট মানুষ কয়েকদিন পর স্কুল খুলবে ব্যাক বই খাতা নিয়ে প্রতিদিন নদী সাঁতরে স্কুল কলেজে কিভাবে যাবে সেই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাই তারা কতৃপক্ষের নিকট সাঁকো টি দ্রুত মেরামতের জোর দাবি জানিয়েছেন।
নাও ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাছেন আলী জানান ,আমাদের ৬ নং ওয়ার্ডের বারোমাসিয়া বাণিদাহ নদীতে ২২০ ফিট দৈর্ঘ্য একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষ দৈনন্দিন পারাপার হতো। সাঁকো টি পুরোনো হত্তয়ায় গত প্রায় এক মাস আগে নদীর পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে যাত্তয়ায় বর্তমানে দুই পাড়ের মানুষজন পারাপারের চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। নদীতে এক বুক পানি ভাঙ্গিয়ে পুরুষ মহিলা বৃদ্ধ ,শিশুরা নদী সাঁতরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এইতো কয়েকদিনের মধ্যেই স্কুল কলেজ খুলবে কোমলমতি ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নদী সাঁতরে কিভাবে স্কুল কলেজে যাওয়া আসা করবে চরম দুঃশ্চিন্তায় আছে ওই এলাকার অভিভাবকরা। তাই আমি মনে করি ওই এলাকার দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের দিকে চিন্তা করে যৌথ উদ্যোগে সাঁকো টি অতিদ্রুত পুনঃনির্মাণ করা প্রয়োজন। সেই জন্য আমি এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজউদ্দৌলা জানান, ইতিমধ্যে বিষয়টি আমরা জ্ঞাত হয়েছি। অতিদ্রুত সরেজমিন পরিদর্শন করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এরপর বরাদ্দ আসলে সেখানে নতুন করে একটি বাঁশের