সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে অজানা পর্যটন স্পট: লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্যের সন্ধানে

  মোহাম্মদ ইরফান ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ১০:৩৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের সৌন্দর্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়; দেশটির প্রত্যেক কোণায় লুকিয়ে রয়েছে এক একটি অনন্য রত্ন, যেগুলো এখনও অনেকের কাছে অজানা। আজকাল, আমরা সাধারণত কক্সবাজার, সিলেট বা চট্টগ্রামের মতো জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোতে ভ্রমণ করি, কিন্তু বাংলাদেশের অনেক জায়গা রয়েছে, যেগুলো প্রকৃতির এক অপরূপ মহিমা ধারণ করে। এই অজানা স্থানগুলো শুধু তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে নয়, বরং তার ঐতিহ্য এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের অজানা সৌন্দর্য খুঁজে পেতে, চলুন একসাথে যাত্রা করি—একটি ভ্রমণ, যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং মানুষের সম্পর্কের মধ্যে নতুন এক সংযোগ গড়ে উঠবে।

বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকা অপরূপ সৌন্দর্যের এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর সৌন্দর্য। এটি একেবারে স্বপ্নের মতো। যেখানে নদী বেয়ে চলা নৌকা, দূরের পাহাড়, আর নদী তীরবর্তী গ্রামের জীবনযাত্রার দৃশ্য এক অপূর্ব মিশ্রণ তৈরি করে। তবে এখানকার সৌন্দর্য শুধু দৃশ্যগত নয়, এটি এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, যেখানে সূর্যাস্তের সময় নদীর স্রোতের সাথে মিলে চলে প্রকৃতির সুর। এখানে গিয়ে আপনি শুধু ভ্রমণই করবেন না, বরং নদীর স্রোতে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবেন। যদি আপনি ট্রেকিং পছন্দ করেন, তাহলে এখানকার পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। তবে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় রাখা সবচেয়ে ভালো হয়, তখন আবহাওয়া শীতল এবং স্বস্তিদায়ক থাকে।

বান্দরবনের নীলগিরি পাহাড় এক অপরূপ সৌন্দর্যের স্থান। কুয়াশার মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি এখানকার সবুজ পাহাড়, ক্লিয়ার ব্লু আকাশ আর পাহাড়ি ঝরনার শব্দে আরও রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। এখানকার পরিবেশ এতটাই শান্ত যে, আপনার মনে হতে পারে এখানে পৃথিবী থেমে গেছে। বিশেষত, সূর্যোদয়ের সময় এটি আপনার অনুভূতি অনেক গভীর করে তুলবে। তবে এই স্থানটি মূলত শীতকালে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। আপনি যদি প্রকৃতির প্রকৃত শান্তি উপভোগ করতে চান, তবে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে এখানে যাওয়া ভালো হবে।

বরগুনার পাথরঘাটায় অবস্থিত হরিণঘাটা বন যেন এক টুকরো সবুজ স্বর্গ। এখানে সারি সারি গাছের ফাঁকে হরিণের লুকোচুরি, পাখির কিচিরমিচির আর বাতাসে গাছের মৃদু দোল যেন প্রকৃতির এক অনবদ্য সিম্ফনি। নদীর পাড়ে বসে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে হারিয়ে যেতে পারেন প্রকৃতির মায়াবী মুগ্ধতায়।

ভোলার মনপুরা উপজেলার কাছেই রয়েছে অপরূপ তারুয়া দ্বীপ। জনবসতিহীন এ দ্বীপ যেন প্রকৃতির আপন ক্যানভাস, যেখানে বালুকাবেলার ওপর নরম ঢেউয়ের স্পর্শ, বাতাসে নারকেল গাছের দোল, আর আকাশে রঙিন সূর্যাস্ত এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। যদি নিরিবিলি, শান্ত এক জায়গায় সময় কাটানোর ইচ্ছে থাকে, তবে এই দ্বীপ হতে পারে আপনার আদর্শ গন্তব্য।

কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত মাছকারিয়া শাপলা বিল যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা এক চিত্রকর্ম। বর্ষাকালে যখন বিলজুড়ে লাল শাপলা ফোটে, তখন এর সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়। ভোরের সূর্যালোকে পানির ওপর লাল শাপলার ঢেউ যেন এক স্বপ্নিল জগৎ তৈরি করে, যা ফটোগ্রাফার ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য স্বর্গের মতো।

কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত ময়নামতি জাদুঘর শুধু ইতিহাস নয়, সময়ের এক অনন্য দরজা। এখানে সংরক্ষিত ব্রোঞ্জের পাত্র, স্বর্ণমুদ্রা, বৌদ্ধমূর্তি ও প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র এক অনবদ্য ঐতিহ্যের সাক্ষ্য দেয়। যারা ইতিহাস ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি এক আবশ্যিক ভ্রমণস্থল।

যদি প্রকৃতির কাছে গিয়ে প্রশান্তির খোঁজ চান, তবে মৌলভীবাজারের চা বাগান ও ঝর্ণাগুলো হতে পারে আপনার আদর্শ গন্তব্য। এখানে বিস্তীর্ণ সবুজ চা বাগান, ঘন কুয়াশায় মোড়ানো পাহাড়ি পথ আর ছড়িয়ে থাকা ঝর্ণার নির্মল পরিবেশ আপনাকে মুহূর্তেই নিয়ে যাবে এক অন্য জগতে।

বাংলাদেশে এমন আরো অনেক স্থান রয়েছে, যা এখনো সবার চোখে ধরা পড়েনি। এসব অজানা স্পট শুধু ভ্রমণকারীদের জন্য নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতি এবং পর্যটনশিল্পের বিকাশেও ভূমিকা রাখে। প্রতিটি নতুন গন্তব্য আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং দেশের প্রতি গর্ব অনুভব করি। বাংলাদেশের অজানা সৌন্দর্যগুলো শুধু প্রাকৃতিক নয়, বরং ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এসব স্থানে আপনি প্রতিটি পাথরের মধ্যে লুকানো ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্পর্শ পাবেন। স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যগুলোও এখানে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিংবা তরুণ ভ্রমণকারীরা যদি এসব গন্তব্যের দিকে মনোযোগ দেন, তাহলে তারা কেবল দেশের অপরিচিত সৌন্দর্যই আবিষ্কার করবেন না, বরং দেশের সংস্কৃতি এবং পরিবেশ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

বাংলাদেশের এসব অজানা স্থানসমূহের সৌন্দর্য আপনাকে প্রকৃতির শাশ্বত এক নতুন দিক দেখাবে। এর একেকটি কোণায় রয়েছে প্রতিটি ভ্রমণকারীর জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। এসব স্থান প্রকৃতির মাঝে এক নতুন দিকের সন্ধান দেয়, যেখানে আপনি শান্তির সাথে সময় কাটাতে পারেন এবং বাংলাদেশের অজানা সৌন্দর্য ও ইতিহাসে ডুবে যেতে পারেন।

অতএব, আপনার পরবর্তী ভ্রমণ পরিকল্পনাতে বাংলাদেশের এসব লুকানো সৌন্দর্য অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলো কেবল আপনাকে এক নতুন দিগন্তের দিকে পরিচালিত করবে না, বরং আপনি প্রকৃতির সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবেন।

মোহাম্মদ ইরফান (শিক্ষার্থী)
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর