এস এম রাফি ৪ মে ২০২৩ , ১০:১২ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সদরুল আইনঃ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে, কারা কারা অংশগ্রহণ করবে—এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে।
আর এই আলাপ-আলোচনার বড় কারণ হল আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আগ্রহ। তারা বলেছেন যে আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হতে হবে এবং হতে হবে অংশগ্রহণমূলক।
তবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া মানে যে বিএনপি অংশগ্রহণ এ সম্পর্কে একটি প্রচ্ছন্ন ধারণা সকলের মধ্যেই ছিল। এর জন্যই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এক ধরনের চাপ অনুভব করছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আকার-ইঙ্গিতে বলা হয়েছিল যে যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অর্থবহ এবং গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
এরকম প্রেক্ষাপটে সরকার কি করবে, বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা করবে কিনা—এই সমস্ত চিন্তাভাবনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে ছিল। তবে সেই সংকট থেকে আওয়ামী লীগ বেরিয়ে এসেছে।
আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে তিন স্তরের রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। এই ব্যাখ্যাটি হল এরকম যে একটি নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে তাহলে নির্বাচনে কে অংশগ্রহণ করলো না করলো সেটা বড় ব্যাপার হবে না।
বরং বিদ্যমান যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদের মধ্য থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যারা বিজয়ী হবে তারাই সরকার গঠন করবে। এটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি স্বীকৃত ফর্মুলা। এটি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগ এই বক্তব্যটিকে কূটনৈতিক অঙ্গনেও প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে এবং এই অংশ হিসেবে বিভিন্ন কূটনীতিকদের সাথে আওয়ামী লীগ নিয়মিত বৈঠক করে এবং এসব বৈঠকের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ এখন অনেকটা আশান্বিত।
বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশগুলো তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তারা এখন বলছে যে নির্বাচনে কে অংশগ্রহণ করলো না করলো সেটি তাদের দেখার বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
কিন্তু যারা অংশগ্রহণ করবে তাদের মধ্যে থেকে যেন জনমতের প্রতিফলন হয়, নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় এবং নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়। অর্থাৎ বিএনপি অংশগ্রহণ করবে বা না করবে সেটি বড় কথা নয়, নির্বাচনে যে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ করবে তাদের মধ্যে থেকে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন তাহলে আন্তর্জাতিক মহল সন্তুষ্ট হবেন।
কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ একটি বিষয় বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না তা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সেই রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই নির্বাচনকে নিরপেক্ষ হয়নি বলা কোনো বাস্তব কারণ নেই।
এরকম একটি কূটনৈতিক তৎপরতায় আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই সফল। বিভিন্ন দেশ এখন এই অবস্থানের সাথে সহমত পোষণ করেছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ভারত এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক দিয়েছে।
তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থাতেই ২০১৮ এর মত একতরফা নির্বাচন করতে চায় না এবং অর্ধেকের বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন এমনটিও চায় না। বরং আওয়ামী লীগ ২০২৩/২৪ এর নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে চায়।
এজন্য আওয়ামী লীগ যে কৌশল গ্রহণ করেছে সেটি হল এককভাবে নির্বাচন করা। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে এককভাবে নির্বাচন করবে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ দলগতভাবে নির্বাচন করবে, জাতীয় পার্টি দলগত নির্বাচন করবে। অন্যান্য দলগুলো যারা ১৪ দলের শরিক তারা স্ব-স্ব দলীয় ব্যানার থেকে নির্বাচন করবে।
ফলে নির্বাচনে একক প্রার্থী বা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটের সম্ভাবনা তিরোহিত হবে। সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করলে নির্বাচনে একটি প্রতিদ্বন্দিতা সৃষ্টি হবে। এরকম পরিস্থিতি হলে বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকলেও খুব একটা ক্ষতি হবে না।
তাছাড়া আওয়ামী লীগ মনে করছে যে বিভিন্ন আসনে বিএনপির কর্মীরা বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে বহু স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়ে যাবে। ফলে নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। আর আওয়ামী লীগ এটিই প্রমাণ করতে চায় যে তারা নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না, প্রশাসনকে ব্যবহার করবে না এবং জোর করে নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করার কোনো প্রচেষ্টাও গ্রহণ করবে না।
এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে বিশ্বকে দেখাতে চায়। আপাতত যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে এটি হলো আওয়ামী লীগের নির্বাচন রূপ প্রকল্প।