সারাদেশ

বিদায়ী মে মাসে ৫০৮ সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১০ জন নিহত, আহত ৯২১:যাত্রী কল্যাণ সমিতি

  uadmin ১৩ জুন ২০২৪ , ৯:১২ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

বিদায়ী মে মাসে দেশের গণমাধ্যমে ৫০৮ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১০ জন নিহত, ৯২১ জন আহতের তথ্য পাওয়া গেছে। এই মাসে রেলপথে ৩৭ টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত, ১১ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ০৫ টি দুর্ঘটনায় ০৩ জন নিহত এবং ৫২ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৫০ টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত এবং ৯৩২ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ১৭৬ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৫ জন নিহত, ১৯০ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৪.৬৪ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৩১ শতাংশ ও আহতের ২০.৬২ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১১৫ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২১ জন নিহত ও ২১০ জন আহত হয়েছে, সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে ২৬ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এভাবে দেশের সড়কে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’র চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা এবং সক্ষমতা ঘাটতি পুরন করা জরুরী। সংশিষ্ট সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘুষ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে গণপরিবহনে নগদ অর্থের লেনদেন বন্ধ করা গেলে পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরতে বাধ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সিসি ক্যামরা পদ্ধতিতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করা গেলে পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হবে, দুর্ঘটনা কমে আসবে।

আজ ১২ জুন বুধবার সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন তুলে ধরে সংগঠনটি। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৫ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩১ জন চালক, ৭৬ জন পথচারী, ১২১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৪ জন শিক্ষার্থী, ১৯ জন শিক্ষক, ৮১ জন নারী, ৫৮ জন শিশু, ০২ জন সাংবাদিক, ০৩ জন প্রকোশলী, ০১ জন মুক্তিযোদ্ধা, এবং ০৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে- ০৬ জন পুলিশ সদস্য, সেনা বাহিনী ০২ , র‌্যাব ০১ জন , ০১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ০২ জন প্রকোশলী, ১০৪ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৬৮ জন পথচারী, ৫৭ জন নারী, ৪৩ জন শিশু, ৪১ জন শিক্ষার্থী, ২৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ০৯ জন শিক্ষক, ও ০৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৭৫৭ টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৭.২১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৪.৭০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১০.০৩ শতাংশ বাস, ১৭.৮৩ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৫.২৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৯.৩৭ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫.৫৪ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫০.৭৮ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২.০৪ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২২.২৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৩.৯৩ শতাংশ বিবিধ কারনে, চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০.৩৯ শতাংশ, এবং ০.৫৯ ট্রোন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩০.৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২০.৮৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৪২.১২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৭৪ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৯৬ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৫৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

বিভাগ .jpg

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ :
১. ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি।
২. মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল।
৩. সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা । রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার।
৪. সড়ক-মহাসড়কে নিমাণ ক্রটি, ফিটনেস যানবাহন ও অদক্ষ চালকের হার ব্যাপক বৃদ্ধি।
৫. ফুটপাত বেদখল, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৬. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি।
৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ :
১. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পুর্নাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালু করা।
২. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানী ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান।
৪. রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘন্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা।
৭. ব্লাক স্পট নিরসন করা, সড়ক নিরাপত্তা অডিট করা, স্টার মানের সড়ক করিডোর গড়ে তোলা।