এস এম রাফি ১২ মার্চ ২০২৩ , ১০:৩৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সদরুল আইন, ক্রীড়া ডেস্কঃ
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নতুন ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।
এদিন মেহেদী হাসান মিরাজ ঘূর্ণিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১১৭ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। জবাবে ৭ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে ২-০ ব্যবধানে।
ইংল্যান্ডের দেয়া ১১৮ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে আসে লিটন দাস ও রনি তালুকদার। দেখে শুনেই শুরু করে এই দুই ওপেনার স্যাম কারনের প্রথম ওভারে নেন ৭ রান। পরে ক্রিস ওকসের ওভারে ১ চারে নেন ৮ রান। ফলে ভালো শুরু করেছিল এই দুই ওপেনার।
তবে স্যাম কারানের তৃতীয় ওভারে শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়েছিলেন লিটন, কিন্তু ব্যাটে নিয়ন্ত্রণ ছিল না তেমন। ফলে ডিপ মিডোউইকেটে ফিল সল্টের হাতে ধরা পড়েন ফর্মখরায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশ ওপেনার। ৯ বলে ৯ রানেই থেমেছেন তিনি, তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
এরপর উইকেট আসে নাজমুল হাসান শান্ত সঙ্গ দিচ্ছিলেন ওপেনার রনিকে। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জোফার আর্চারের বলে মইন আলির কাছে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন আট বছর পর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া রনি। ১৪ বলে করেন ৯ রান।
এরপর ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ভাল সঙ্গ দিচ্ছিলেন দিচ্ছেন তৌহিদ হৃদয়। তবে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে শর্ট বলে খেলতে গিয়ে ফেরেন তৌহিদ হৃদয়। জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন পয়েন্টে।
আন্তর্জতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পেলেন লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ।
এরপর উইকেটে আসেন মিরাজ। ১৬ বলে ২০ রানের ক্যামিয় খেলেন। শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। বোলিংয়ে দুর্দান্ত মিরাজ ব্যাটিংয়েও রেখেছেন অবদান।
অন্যদিকে একপাশ আগলে রাখেন নাজমুল হাসান শান্ত। তবে দলের চাপের মুহূর্তে সঙ্গ দিতে পারেননি ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান। মঈন আলির বলে লং অফে ক্রিস জর্ডানের হাতে ধরা পড়েন সাকিব।
দলীয় ১০০ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বংলাদেশ। সাত নম্বরে নেমে আফিফও ব্যর্থ এদিন, ৩ বলে ২ রান করেই ফেরেন আর্চারের ১৪৮ কি.মি. গতির বোলিংয়ে। ১০৫ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ছিলো ১৩ রান। ১৯তম ওভারে ক্রিস জর্ডানের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাকিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের দিকে নিয়ে যান শান্ত। ওই ওভারের চতুর্থ আর পঞ্চম বলে টানা দুই চারে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে ভেড়ান তাসকিন আহমেদ।
৪ উইকেটে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন শান্ত আর তাসকিন।আগের ম্যাচেই ফিফটি করে ম্যাচসেরা হওয়া শান্ত আজও অপরাআজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন ৪৭ বলে ৪৬ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে।
এর আগে, সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে ইংলিশরা। শুরুতেই আঘাত হানে তাসকিন। ম্যাচের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে তাসকিনের বলে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দেন মালান। ৮ বলে তিনি করেন ৫ রান।
বল হাতে দ্বিতীয় আঘাতটা হানেন সাকিব আল হাসান। ওপেনার ফিল সল্টকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের বলে সাকিব নিজেই লুফে নেন ক্যাচ। ১৯ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ২৫ রান করে ফেরেন সল্ট।
এরপর দলীয় ৫৫ রানের মাথায় জস বাটলারকে সাজঘরে ফেরত পাঠান বাংলাদেশের তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। ইয়র্কার লেন্থের বলে বোল্ড হয়ে যান ইংলিশ অধিনায়ক। ৬ বলে মাত্র ৪ রান করেন বাটলার। দলীয় স্কোরে মাত্র ২ রান যোগ হতেই আবারও টাইগার শিবিরে উল্লাস।
এবার বল হাতে চমক দেখান দলে ফেরা স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। তার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে বদলি খেলোয়াড় শামীম হাসানের তালুবন্দি হন মঈন আলী। ১৭ বলে এক চার ও ছক্কায় ১৫ রান করেন তিনি।
১৫তম ওভারে জোড়া আঘাত মেহেদী হাসান মিরাজের। বিদায় নেন স্যাম কুরান (১২) ও ক্রিস ওকস (০)। দুজনই মিরাজের বলে হন স্টাম্পড। ১৪.৪ ওভারে ৯১ রানে ৬ উইকেট পতন ইংল্যান্ডের।
দলীয় ১০০ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ১০ বলে ৩ রান করা ক্রিস জর্ডানকে রনি তালুকদারের ক্যাচ বানান মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪ ওভারে ১২ রানে চার উইকেট নিলেন মিরাজ। যা তার টি টোয়েন্টির ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আগেরটি ছিল ১৭ রানে তিন উইকেট।
টেল এন্ডাররা চমক দেখাতে পারেনি। ২৮ বলে সর্বোচ্চ ২৮ রান করা বেন ডাকেটকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। অভিষিক্ত রেহান আহমেদ ১১ বলে ১১ রান করে হয়ে যান রান আউট। শেষ বলে রান আউট হন জফরা আর্চার।
বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ে ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন টাইগার অলরাউন্ডার মিরাজ। সাকিব, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ নিয়েছেন একটি করে উইকেট। বাকি দুটো হয়েছে রানআউট। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ম্যাচসেরা মিরাজ।