রাজনীতি

ভয়াল অক্টোবর শুরু : আতঙ্কিত বাংলাদেশ

  এস এম রাফি ১ অক্টোবর ২০২৩ , ১১:৪০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

অক্টোবর মাস বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে অনেক কিছু ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন রাজনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিও বলছেন, এই মাসে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘অক্টোবরেই সরকারের পতন ঘটবে।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘এই অক্টোবরেও আছি, আগামী অক্টোবরেও থাকবো।’ অক্টোবর নিয়ে পাল্টাপার্টি ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে কি হতে যাচ্ছে চলতি অক্টোবরে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরু হওয়া মাস অক্টোবরে নানা ঘটনা রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে।

বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ এবং জটিল অসুখে তিনি ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন বলেই দাবি করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বিএনপির নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠানো হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নিয়ে বক্তৃতায় আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণাও করেছিলেন। তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন আইন মন্ত্রণালয় না’কোচ করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আজ ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে গেলে আদালতের মাধ্যমে যেতে হবে বলেই তিনি দাবি করেছেন।

বেগম খালেদা জিয়ার যদি কিছু হয় তাহলে রাজনীতি নতুন বাক নেবে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি বড় ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা করতে পারে। আন্দোলন এর মাধ্যমে বেগবান হতে পারে এমনটি কেউ কেউ মনে করছেন।

আবার অনেকের ধারণা বেগম খালেদা জিয়ার তেমন কিছু হলে খুব একটা বড় প্রভাব রাজনীতিতে পড়বে না। তবে সরকার যদি শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয় তাহলে সরকারের জন্য তা ইতিবাচক হতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। অক্টোবরে এই অর্থনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে কোনো কোনো বিশ্লেষকের ধারণা।

বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ ক্রমশ কমতে থাকা, ডলারের বাজারে হাহাকার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে দিশেহারা অবস্থায় নিয়ে গেছে।

এই রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে অর্থনৈতিক সংকট রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

এই অক্টোবর মাসে বোঝা যাবে অর্থনীতিতে সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং সেই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করে কিনা।

অনেকেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী অক্টোবরে একটি নাটকীয় ঘোষণা দিবেন। আগামী ৪ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা আছে। দেশে ফিরে তিনি নির্বাচন এবং বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো ঘোষণা দিতে পারেন এমন প্রত্যাশা করছেন অনেকে।

প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব সময় একটা ম্যাজিক থাকে। যেকোনো সংকটে তিনি একটা সমাধান নিয়ে হাজির হন। প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন নিয়ে যে অচল অবস্থা তা দূর করার জন্য কোন ধরনের সমাধান দেবেন সেটার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কমতি নেই। একের পর এক বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা এবং শর্ত আরোপ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

চলতি অক্টোবরে বোঝা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছে এবং কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করতে চায়? এখানে একটি অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কায়েম করতে চায় নাকি নির্বাচনের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয় হবে তা স্পষ্ট হবে এই অক্টোবরে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি কিভাবে দেখতে চায়? বিশেষ করে নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের অবস্থান কি তা পরিষ্কার হবে অক্টোবরে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অক্টোবর মাসেই সবকিছু নির্ধারিত হবে। কারণ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করার কথা।

তার আগেই যেকোনো একটি ঘটনা বা বিভিন্ন ঘটনার সমন্বয় বাংলাদেশের রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। কি হবে অক্টোবরে তা বোঝা যাবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই।