বিবিধ

ভারতীয় গরু না আসায় খুশি খামারীরা, রয়েছে ক্রেতা সংকট

  এস এম রাফি ২৬ জুন ২০২৩ , ১০:০৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা কে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রাম জেলার বৃহত্তম যাত্রাপুর হাট এ কোরবানী গরু-ছাগল বেচাকেনার ধুম লেগেছে। ব্রহ্মপুত্রের বিশাল জলরাশি পার হয়ে প্রতিবছর ভারতীয় গরুর আমদানী হলেও, এবছর আসেনি প্রতিবেশী দেশের গরু। যার ফলে দেশী খামারীদের মধ্যে স্বস্তি ও খুশির হাসি দেখা গেছে। তবে গরু ও ছাগলের তুলনায় ক্রেতা অনেক কম বলে জানায় খামারীরা।
শনিবার হাটের দিন বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত স্থানের পাশেই বিশাল এলাকা জুড়ে বসে এই কোরবানীর পশুর হাট। হাটে বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর দিকে ঝুঁকছেন বেশি।

ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে পশুর হাট সরগরম হয়ে উঠেছে। কাঁদা-গোবর পেরিয়ে লোকজন গরু দেখলেও কিনছেন কম। বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারী গরুগুলোর দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় খুব সহজে কিনছেন অনেকেই। এছাড়াও সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় প্রতিবছর কোরবানির সময় যাত্রাপুর হাটে চোরাই পথে ভারতীয় গরু উঠলেও এবারে ভারতীয় গরু না আসায় স্বস্তিতে আছেন প্রান্তিক কৃষক ও খামারীরা।

চর বাসীকে ঈদ উপহার দেয়ার জন্য কুড়িগ্রাম শহর থেকে গরু কিনতে এসেছেন ইউসুফ আলমগীর ও জাহানুর রহমান । তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান,প্রতিবছর তারা সদরের চর ভগবতীপুর ও আইরমারীর চরে গরু উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করেন। হাট থেকে দেশী মাঝারী গরু কিনলেন একটির দাম পড়লো ৭০ হাজার ও অন্যটির দাম ৭২ হাজার। দাম একটু কম বলেই জানালেন তারা। গতবার এর থেকেও বেশি দামে কিনতে হয়েছিলো ভারতীয় গরু।

জেলা শহরের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন,’জেলার সব থেকে বড় হাট আমাদের এই যাত্রাপুর। এবার ভারতীয় গরু না থাকায় দেশী অনেক গরু উঠেছে। আশা করছি সাধ্যের মধ্যে পছন্দ মতো গরু কিনতে পারবো।’

হাটের ইজারাদাররা বলছেন,ভারতীয় গরু না আসায় এবার হাটে বাইরের জেলার ব্যাপারীর সংখ্যা কম। অন্যদিকে বন্যার পানি বাড়ার কারনে এবার হাটে চরাঞ্চলের অনেক গরু এসেছে। আর বিক্রেতার তুলনায় হাটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। যার কারণে অল্প লাভে খামারীরা গরু ছেড়ে দিচ্ছেন।

ব্রহ্মপুত্রের দ্বীপচর মোল্লারহাট থেকে দুটি গরু নিয়ে এসেছেন কৃষক আব্দুল খালেক । তিনি বলেন,’ আমার মাঝারী এই দুইটা গরুর দাম প্রতিটি ৯০ থেকে ৯৫ হাজার করে বলতেছি। বড় ব্যাপারী নাই। স্থানীয় লোকজন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার দাম বলে। এই দামে বিক্রি করলে লাভ কিছু থাকবে না। তারপরও ৭৫ হাজার পেলেই ছেড়ে দেবো।’

মেকুরের আলগার চরের কৃষক মোন্নাফ আলী বলেন, সাড়ে তিন মণ ওজনের দুইটা ষাঁড় গরু ব্যাচবার(বিক্রি) আসছি । নৌকা ঘাটেই ৮৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করলাম। ছোট গরু কেনার মানসের (মানুষের) অভাব নাই। হাটত আনার আগেই বিক্রি হয়া যায়। ভারতে গরু না হামরা খুব খুশি।’

নাগেশ্বরী মাদারগঞ্জ থেকে আসা খামারী জিয়াউর রহমান বলেন,’এবার ভারতের গরু নেই এটা খুশির খবর। কিন্তু ক্রেতা সংকট খারাপ দিক। আমার এই গরুটা ১ লাখ ১০ হাজার দাম চাচ্ছি। যাত্রাপুর হাটে এবার বড় গরুর তেমন চাহিদা দেখছি নাহ। লোকজন বেশি মনে হলেও প্রকৃত ক্রেতা নাই। আর দুইহাট গেলে এই দাম না পেলে কম-বেশি করে ছেড়ে দেবো।’

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন,’গতবছরের চেয়ে এবার হাটে দেশী ছোট ও মাঝারী গরুগুলোর দাম একটু কম। বন্যার পানি উঠার. কারণে চরের লোকজন বাড়িতে গরু না রেখে কমদামে বিক্রি করে দিচ্ছে।’

অন্যদিকে,যাত্রাপুর হাটে ক্রেতা সংকট থাকলেও

নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ইজারা আদায়। ঈদের হাট উপলক্ষে যাত্রাপুর হাটে ইজারা ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত গরুর খাজনা ৫০০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার ২৫০ টাকা। অথচ ক্রেতার কাছ থেকে গরুর খাজনা ৭০০ টাকা এবং ভেড়া-ছাগলের জন্য ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও বিক্রেতার কাছ থেকে আগে গরু প্রতি ২০০ টাকা নেওয়া হলেও ঈদ উপলক্ষে ৩০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

যাত্রাপুর হাট ইজারাদের অংশীদার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন,’ঈদ উপলক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এই অতিরিক্ত ইজারা শুধুমাত্র ঈদের আগের তিন হাট পর্যন্ত নেওয়া হবে, ঈদের পর থেকে এই অতিরিক্ত খাজনা আদায় হবে না।’

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোশারফ হোসেন জানান,কুড়িগ্রামের সীমান্তগুলোতে বিজিবির কড়া নজরদারির কারণে যাত্রাপুর হাটে এবার ভারতীয় গরু আসতে পারেনি। ৯ উপজেলায় এ বছর কোরবানীর জন্য ২ লাখ ৬৯ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১ লাখ বেশি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, কোরবানির ঈদের হাট উপলক্ষে যাত্রাপুর হাটসহ জেলার অন্যসব হাটগুলোতে জাল টাকা সনাক্তকরণে ব্যাংকগুলো মেশিন বসিয়েছে। এছাড়াও জেলা পুলিশ কঠোরভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছেন। আর হাটে

বেশি টাকা ইজারা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। নিয়মের বাইরে গিয়ে বেশি টাকা ইজারা আদায়ের কোন সুযোগও নেই। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে অতিরিক্ত ইজারা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’