রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ , ৭:৫১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
২০০১ সালের (১৮ এপ্রিল) রক্তাক্ত বড়াইবাড়ী গ্রাম। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বড়াইবাড়ী গ্রামের ঘুমন্ত মানুষ ও বিডিআর ক্যাম্পের উপর নির্মমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেই সময়ে তৎকালীন বিডিআর ক্যাম্প বর্তমান বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ বিজিবি ক্যাম্প ও বড়াইবাড়ী ছিটমহল দখলে নেওয়ার জন্য ভারতীয় বিএসএফ’র অপচেষ্টা রুখে দেয় বিডিআর জোয়ান ও সীমান্তবাসীরা। স্থানীয়রা বীর গ্রাম বড়াইবাড়ি নাম করণ করেন।
তখন থেকে ওই গ্রামে প্রতি বছর সাবেক সংসদ সদস্য কুড়িগ্রাম-৪ আসন রুহুল আমিন এমপি ও গ্রামবাসির উদ্যোগে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় সাবেক বিডিআর সদস্য ঢাকা, সাবেক সেনাবাহিনীর সদস্য ঢাকা, সাবেক সংসদ সদস্য, স্থানীয় এলাকাবাসি, বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও রাজনৈতিক দলসহ এই দিবস শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ইং ২৪ তম বাড়াইবাড়ী দিবস পালন করা হয়েছে।
সেই সময় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীদের মাঝে গুলি বিনিময়ের সময় ৩ বিডিআর জোয়ান ও ১৬ জন ভারতীয় বিএসএফ সদস্য নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় ৬ বাংলাদেশি সাধারণ মানুষ। আর বিএসএফ’র মর্টার সেল ও আগুনে বড়াইবাড়ী ছিটমহল ধ্বংসস্তপে পরিণত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে বড়াইবাড়ী সীমান্তের মানুষ বড়াইবাড়ী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। বরাবরের ন্যায় র্যালি, আলোচনা সভা, মিলাত মাহফিল, তিন জন শহীদ বিডিআর পরিবার, পাঁচ জন যোদ্ধাহত বীর সৈনিক, ঢাকা থেকে আসা (অব:) বিডিআর, সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্যের মাঝে, প্রধান অতিথি ও সভাপতিকে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার রৌমারী কুড়িগ্রাম এর পক্ষ থেকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্বারক প্রদানসহ ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করেন। এসময় প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারসহ এলাকাবাসি সরকারের কাছে বড়াইবাড়ী দিবসকে রাষ্ট্রীয় স্বীস্কৃতি, পাঠ্য প্রস্তুকে বড়াইবাড়ি দিবসের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করণ, বড়াইবাড়ি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, জমি বাংলাদেশীয় রেকর্ড ভুক্ত করণ, পর্যটন কেন্দ্র ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানান।
এসময় সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, কর্নেল মো জয়নাল আবেদীন (অব:)। বিশেষ অতিথি প্রফেসর তসলিম উদ্দিন সাবেক অধ্যক্ষ সরকারি কলেজ ময়মানসিংহ, মেজর এম.ডি জামাল হায়দার, কর্নেল কাজী জাকারিয়া, মেজর হুমায়ুন কবির, মেজর শাকিল নেওয়াজ, হান্নান শাহীন মেজর আনিসুর রহমান, আজিজুর রহমান জেলা বিএনপি আহবায়ক সদস্য, রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ লুৎফর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও আহবায়ক উপজেলা বিএনপি, মোখলেছুর রহমান আহবায়ক চর রাজিবপুর উপজেলা বিএনপি, মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব, হায়দার আলী উপজেলা জামায়াতে আমীর। আরও যারা উপস্থিত ছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষক পরিবার রৌমারী এর বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম বাবু, আহসান হাবিব সাদা, জহরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, আব্দুল মোতালেব, হুমায়ন, আবু জাফর, রফিকুল ইসলাম লিচু, হারুঅর রশিদ তুহিন,নাজমুল ইসলাম বাবু, শফিকুল, জিয়া, হাসান, আনিছ, আতিক,পারভেজ, কাইসারসহ প্রায় ২ শতাধীক শিক্ষক উপস্থিত থাকেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আবু তালেব মাস্টারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তি বর্গ।
উল্লেখ্য যে, ওই দিনের বিএসএফ বিডিআর’র মাঝে প্রায় ৪২ ঘন্টার সম্মুখ যুদ্ধে বড়াইবাড়ী ছিটমহলের ১৭৯টি বাড়িতে অগ্নি সংযোগ ঘটানো হয়। বিডিআর’র সঙ্গে সীমান্তবাসীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় বিএসএফ সদস্যরা।
যুদ্ধে বিডিআর’র সদস্য নায়েক সুবেদার ওয়াহেদ মিয়া, সিপাহী মাহফুজার রহমান ও সিপাহী আব্দুল কাদের শহীদ হন। শহীদ ৩ জনের স্মরণে ক্যাম্পের সামনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফজ্জামান বাবর স্মৃতিসৌধ ফলক ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৩ তারিখে শুভ উদ্বোধন করেন।