অনলাইন ডেস্ক : ১৪ নভেম্বর ২০২৪ , ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সংগৃহীত ছবি
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের অধীনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এই তদন্তে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হবে রাতের ভোট, ভোট ডাকাতি এবং নির্বাচনের দিন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভূমিকা। এতে, দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পাশাপাশি পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তদন্তে যদি সরকারি কোনো কর্মকর্তা রাতের ভোট বা ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িত পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর ও আইনানুগ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মতে, নির্বাচনকালীন দুর্নীতি ও ভোট কারচুপিতে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “বিগত সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচন বিশেষ করে রাতের ভোট এবং ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা হয়েছে। প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় হাসিনা সরকার এসব অনিয়ম চালিয়ে গেছে।”
এ বিষয়ে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস-উর-রহমান বলেন, “এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর কাজ করছে। এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানাতে যোগাযোগ করুন তাদের সঙ্গে।”
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) দাবি করেছে, ভোট ডাকাতির নির্বাচনে যেসব সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারা বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ভুলে গেলে চলবে না, তারা জনগণের চাকর। দলীয় পক্ষপাতিত্ব ও অশুদ্ধ কাজে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক এ বি এম আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করেছেন, “বিগত সরকারের ভোট কারচুপির সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তারা শুধু গণতন্ত্র হত্যা করেননি, বরং রাষ্ট্রদ্রোহিতারও শামিল।” তিনি আরও বলেন, “সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, যারা এই অনিয়মে জড়িত, তাদের চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনা হোক। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।”
তদন্তের অংশ হিসেবে সাবেক সমাজকল্যাণ সচিব মো. ইসমাইল হোসেন এবং নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলমকে ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পুলিশ বিভাগের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কিছু বিভাগীয় কমিশনারকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিদেশে পালানোর চেষ্টা এবং চিকিৎসা বা বিদেশে পড়াশোনার কারণে বিদেশে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি জানিয়েছেন, “আমরা এসব বিষয়ে আগে শুনেছি, কিন্তু আমাদের কিছুই করার ছিল না। কারণ চাকরি করতে হলে সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়।”
এদিকে, সরকারের নীতিনির্ধারক মহল জানিয়েছে, পরবর্তী সময়ে এ তদন্তের মাধ্যমে সরকার তাদের অবস্থান আরও দৃঢ় করবে এবং নির্বাচনে অনিয়মের সাথে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনবে।