সদরুল আইন, স্টাফ রিপোর্টার ৭ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৮:০৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আরাম আয়েশের একটি নির্বাচন চেয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন যে, তাদের নিজের পছন্দের একজন ডামি প্রার্থী থাকবে, তিনি নামকাওয়াস্তে ভোটে অংশগ্রহণ করবেন এবং নির্বাচনে তার জয় সুনিশ্চিত হবে।
আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রার্থীর প্রথম পরিকল্পনা ছিল ২০১৪ এর মতো একটি নির্বাচন করবেন, যেখানে বিনা খরচে বিনা ভোটে তারা আবার এমপি হবেন।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ঘোষণা করেন যে, কোনও প্রার্থীরই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া যাবে না এবং কেউ যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তাহলে তাকে গ্রহণ করা হবে না।
তখন প্রার্থীদের দ্বিতীয় ভাবনা ছিল তাদের পছন্দের একান্ত-অনুগত কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাবেন এবং একটা নির্বাচন নির্বাচন খেলার মাধ্যমে তারা বিজয়ী হবেন, যে নির্বাচনে তাদের পরাজয়ের কোনও সম্ভাবনা থাকবে না।
কিন্তু সেই হিসাব নিকেশ পাল্টে গেছে আওয়ামী লীগ সভাপতির সিদ্ধান্তে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্বাগত জানিয়েছেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই বসিয়ে দেওয়া যাবে না- এই বার্তাটা সুস্পষ্ট করেছেন। তার এই বার্তার পর এখন নির্বাচনের মাঠ সরগরম।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছে যেটা প্রত্যাশিত ছিল যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে তারা তাদের নিজ যোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা দিয়ে লড়াই করবেন এবং সেই লড়াইয়ে তারা বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করবেন।
কারণ, যাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তারা প্রত্যেকেই জনপ্রিয়। কিন্তু বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় দেখা যাচ্ছে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শুরুতেই আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থীকে কোণঠাসা করে ফেলেছেন।
এখন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা কায়দা-কানুন করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই।
বরিশালের একটি আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বরিশালের সাবেক মেয়র সাদেক আবদুল্লাহ এবং সেই একই আসনে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি মেজর অবসরপ্রাপ্ত জাহিদ ফারুক।
কিন্তু এই দুই ব্যক্তির মধ্যে জাহিদ ফারুক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করছেন। অন্যদিকে, সাদিক আবদুল্লাহ গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি, তার চাচাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
এবার তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বাজিমাত করতে চান। কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাহিদের প্রধান লক্ষ্য এখন যেন নির্বাচনে জয় লাভ নয় বা জনগণের কাছে ভোট চাওয়া নয়, বরং তিনি এখন নির্বাচনের আগে কিভাবে সাদিক আব্দুল্লাহকে কোণঠাসা করা যায় সেই চেষ্টা করছেন।
একের পর এক অভিযোগ করেছেন সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে। সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন বাতিল করাটাই যেন তার প্রধান কাজ, জনগণের কাছে ভোট চাওয়া নয়৷
একই অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে আরও বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায়। রাজশাহীর একটি আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তার নির্বাচনী প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে যে সমস্ত আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন তা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।
একই ঘটনা ঘটেছে আরও বহু নির্বাচনী এলাকায়। যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নানারকম হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। গতকাল ফরিদপুরের একটি আসনে ব্যবসায়ী সংগঠনের সাবেক সভাপতি এ.কে আজাদ অভিযোগ করেছেন যে, তার প্রার্থীদেরকে মারধর করা হচ্ছে।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শামীম, আর এ.কে আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তিনিও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য বড় ধরনের একটি হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছেন।
বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এরকম অন্তত ১০০টি আসন পাওয়া গেছে যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের এখন প্রধান কাজ হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা বা তাকে শক্তি প্রয়োগ করে নিষ্ক্রিয় করা।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যদি জনপ্রিয়ই হবেন, তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তাদের কেন এই নজিরবিহীন তৎপরতা, তা সহজেই বোধগম্য।