সারাদেশ

কুড়িগ্রামে বেওয়ারিশ কুকুরের দাপটে জনজীবন অতিষ্ঠ, ৭ মাসে কুকুর কামড়িয়েছে ৭৮৬৬ জনকে 

  এস এম রাফি ২১ আগস্ট ২০২৩ , ৯:৩১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

কুড়িগ্রামে বেড়েই চলছে বেওয়ারিশ কুকুরের দাপট। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ ও পশুকে কামড়ে দিচ্ছে এসব কুকুর। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা। কিন্তু জলাতঙ্ক প্রতিষেধক সরকারি ভ্যাকসিন মিলছে না হাসপাতালগুলোতে। মানুষের হয়রানি ও ভোগান্তি বাড়লেও কুকুর নিধনে বা নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো উদ্যোগ।

দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও মোড়ে দল বেঁধে ওৎপেতে থাকে কুকুর। কেউ বিরক্ত না করলেও তেড়ে আসে পথচারীদের দিকে। বাদ পড়ে না যাহবাহনে চলাচলকারী যাত্রীরাও। কুকুরের তাড়া খেয়ে বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবী থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে কুকুর আতঙ্ক বিরাজ করছে। কুকুর নিয়ন্ত্রণ করা না হলে জলাতঙ্ক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নাগেশ্বরীতে জুয়ার সরঞ্জাম সহ ৪ জুয়ারু আটক

জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও ৮ উপজেলায় অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন রয়েছে। কোনো কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক বছর ধরে নেই ভ্যাকসিন। ফলে সারা জেলার কুকুরে কামড়ানো রোগীদের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এই হাসপাতালটিও  চলতি মাসের ৬ আগস্ট থেকে জলাতঙ্কের ২য় ক্যাটাগরির ভ্যাকসিন শূন্য। যেখানে এ ধরণের রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এখানে অবস্থা। সরকারি টিকা না থাকায় রোগীদের ফার্মেসি থেকে টিকা কিনতে হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের জেলা জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে কর্মরত নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিমাসে টিকা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা গড়ে ১২০০-১৫০০জন। তবে শীতকালে রোগীর পরিমাণ বেড়ে যায়। জানুয়ারি থেকে জুলাই, ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৭৮৬৬ জনকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হয়েছে। সাধারণত ৩ ক্যাটাগরিতে রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হলেও ২য় ও ৩য় ক্যাটাগরির রোগীকে প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হয়। তবে ২য় ক্যাটাগরির রোগীর সংখ্যাই বেশি।

কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার রাব্বি  জানায়, সকাল বেলা প্রাইভেট ও স্কুলে যাওয়ার সময় কুকুরের দল একা পেলে  ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে আসে। খুব ভয় লাগে যদি কামড়ায়।

নাগেশ্বরী উপজেলার বোয়ালেরডারা গ্রামের আব্দুল মোমেন বলেন, আমি প্রতিদিন হেটেই আমার কর্মস্থলে আসা যাওয়া করি। কুকুরের ভয়ে রাতে একা একা বাড়িতে যাওয়া যায় না। ক্রমান্বয়ে সকল মানুষের আতঙ্কের কারণ হচ্ছে এই বেওয়ারিশ কুকুর। তাই সরকারিভাবে নতুন কোনো পন্থায় কুকুর নিধন করতে হবে।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নিতে উলিপুর উপজেলার কাছারিপাড়া থেকে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমার বাড়ির আসেপাশে বেশ কয়েকটি কুকুর মুরগি ও হাঁসকে ধরে খেয়ে ফেলছে এবং ছাগল, গরুসহ মানুষকেও কামড় দিচ্ছে। আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না পেয়ে এখানে এসেও পেলাম না।”

কুড়িগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু জানান, আন্তর্জাতিক আইনে নিরীহ প্রাণিকে হত্যার বিষয়টি মানবতা পরিপন্থী হওয়ার কারণে বর্তমানে কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রাণিকল্যাণ আইন-২০১৯ এর ৭ ধারা অনুযায়ী বেওয়ারিশ কুকুরসহ কোনো প্রাণিকে অপসারণ, হস্তান্তর ও ফেলে দেয়া যাবে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। তাই রাষ্ট্রকেই কুকুর নিয়ন্ত্রণে নতুন কিছু ভাবতে হবে।

কুড়িগ্রামে জোড়া খুন মামলার মূলহোতা একযুগ পর গ্রেফতার

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মনজুর-এ-মুর্শেদ জানান, জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সরবরাহ পেলে হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হবে। অন্যদিকে আইনগত কারণে কুকুর নিধন না করে বন্ধ্যা করণের বিষয়ে ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র মোঃ কাজিউল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী কুকুর নিধন বন্ধ থাকায় আমরা কুকুর নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। কিন্তু কুকুরের কারণে কুড়িগ্রামে সব বয়সী মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। কুকুর নিয়ে জনদুর্ভোগ কমাতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। সরকারিভাবে কোনো সিদ্ধান্ত পেলে সে মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।