এস এম রাফি ১৯ অক্টোবর ২০২৩ , ১১:১৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সদরুল আইন,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এটিকে আন্দোলনের মহাযাত্রা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু মহাযাত্রার আগে বিএনপি নানারকম মহাবিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির সামনে রয়েছে ৫টি মহাবিপদ।
এই বিপদগুলো অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কতটা মহাযাত্রা সফল করতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়। কারণ এর আগে ১০ অক্টোবর বিএনপি একই ধরনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। এবার কি বিএনপি পারবে?
বিএনপির সামনে এই মহাযাত্রার আগে যে ৫টি মহাবিপদ অপেক্ষা করছে তার মধ্যে রয়েছে:
১। বিএনপি নেতাদের মামলা এবং ধরপাকড়:
মহাসমাবেশের পরই সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির দের শতাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই তথ্য জানিয়েছেন।
কিন্তু অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্ট মামলা এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। যারা আদালত থেকে জামিন নেননি তাদেরকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন যে, বিএনপির নেতাদেরকে দণ্ডিত করা হচ্ছে যেন তারা নির্বাচন করতে না পারেন।
এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের মহাযাত্রা বড় ধরনের বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
২। দলের ভিতরে অবিশ্বাস, দ্বন্দ্ব:
বিএনপি মহাযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা করেছে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে। কিন্তু চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের অনীহা, এক ধরনের কোন্দল, দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির নেতাদের মধ্যে অবিশ্বাস বেড়ে উঠেছে।
বিএনপির অনেক নেতাই একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তারা মনে করছেন যে কেউ কেউ আন্দোলনের মাঝপথে পিছুটান দিতে পারে এবং আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করতে পারে।
আর এই সমস্ত কারণেই বিএনপির মধ্যে এখন সন্দেহ অবিশ্বাস দানা বেঁধে উঠেছে।
বিএনপির মধ্যে যারা নির্বাচনমুখী স্রোত, তারা যেকোনো সময়ে বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দিতে পারেন বলে বিএনপির মধ্য থেকে অনেকে মনে করছেন।
৩। আন্তর্জাতিক মনোভাব:
আন্তর্জাতিক মনোভাব বিএনপির মহাযাত্রার জন্য একটি মহাবিপদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি ভূমিকা পালন করবে সেটির উপর নির্ভর করছে বিএনপির আন্দোলনের অনেকখানি।
কারণ বিএনপি এখন যে আন্দোলন সংগঠিত করতে পারছে তার প্রধান কারণ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃশ্যমান চাপ। এখন যদি কোনো কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব পরিস্থিতির বাস্তবতায় বাংলাদেশকে উপেক্ষা করে সেক্ষেত্রে বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি মহাসংকটের মধ্যে পড়বে।
৪। সুশীলদের প্রলোভন:
গত কিছুদিন ধরেই সুশীলরা বিএনপির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং বিএনপির সঙ্গে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে একাত্ম হয়েছেন। কিন্তু সুশীলদের প্রলোভন ফাঁদ কিনা তা নিয়ে বিএনপির অনেকেই সন্দেহ করছেন।
বিশেষ করে সুশীলরা তাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিএনপিকে ব্যবহার করছে কিনা সেটি এখন অনেকের কাছে বড় প্রশ্ন।
শেষ পর্যন্ত যদি সুশীলরা তাদেরকে ব্যবহার করে তাহলে মহাযাত্রার কর্মসূচী বিএনপির জন্য মরণ যাত্রার কর্মসূচি হতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
৫। আওয়ামী লীগের সংগঠন:
আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির কর্মসূচির সাথে তারা সমান্তরাল কর্মসূচি দেবেন।
২৮ অক্টোবর ঢাকা তারা দখলে রাখবেন এমন ঘোষণাও দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
এরকম পরিস্থিতিতে মহাযাত্রা কর্মসূচি বিএনপি সফল করতে পারবে কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়।