রাবি প্রতিনিধি ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ , ৪:৫১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাড়ছে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। লক্ষনজনিত কারণে গত ১১ কার্যদিবসে মোট ১৭৭ শিক্ষার্থীর রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে জন্ডিস ধরা পড়েছে ৮৫ জনের। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান টেকনিক্যাল অফিসার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তবে চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসকরা বলছেন, আতঙ্কিত না হয়ে বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যকর খাবার ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি তাদের সার্বিকভাবে সচেতন হতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, একাডেমিক ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে সাবমার্সিবল পাম্পের সংখ্যা খুবই কম। পানির অন্যান্য উৎসগুলো নিরাপদ না হওয়ায় এ রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল এবং একাডেমিক ভবনগুলোতে যেন বিশুদ্ধ পানির ব্যাবস্থা করা হয়।
উপ-প্রধান টেকনিক্যাল অফিসার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান জানান, গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৭৭ জন শিক্ষার্থীর রক্ত পরীক্ষা করালে জন্ডিস ধরা পড়ে ৮৫ জনের। তাদের মধ্যে ১৫ তারিখ ১১ জনের পরীক্ষা করালে জন্ডিস আক্রান্ত ধরা পরে সাতজনের। এভাবে ১৬ তারিখে ১৩ জনে পাঁচজন, ১৭ তারিখ আটজনে ছয়জন, ১৮ তারিখে ২১ জনে ১২ জন, ২১ তারিখে ১৬ জনে ১০ জন, ২২ তারিখে ১৭ জনে আটজন, ২৩ তারিখে ১৫ জনে পাঁচজন, ২৪ তারিখে ১৮ জনে আটজন, ২৫ তারিখে ২৭ জনে সাতজন, ২৮ তারিখে ২০ জনে এগারোজন এবং ২৯ তারিখ ১১ জনে ছয়জন শিক্ষার্থীর জন্ডিস ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, আমাদের ধারণা, দূষিত পানি থেকে ছড়ানো হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসের কারণেই শিক্ষার্থীদের জন্ডিস হচ্ছে। এটি মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। এ রোগ থেকে নিরাময় পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের সচেতনতা। যেসব শিক্ষার্থী হলে থাকে, তাদের সাব-মারসিবলের পানি খেতে হবে। ক্যাম্পাসে হোটেল ও ক্যান্টিন মালিকদের উচিত নিরাপদ টিউবওয়েলের বা, সাবমার্সিবল পাম্পের পানি দিয়ে রান্নার কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। লক্ষণ খারাপ মনে হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে ট্রিটমেন্ট নিতে হবে।
এবিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, যেদিন থেকে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়া শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই মেডিকেল সেন্টারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে করনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে। বাইরের পানি পান না করে টিউবয়েল বা সাবমার্সিবল এর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
উল্লেখ্য, উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, জন্ডিস ইক্টেরাস নামেও পরিচিত। এটি আসলে কোন রোগ নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ত্বক,স্ক্লের বা চোখের সাদা অংশ ও অন্যন্য মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্ব 1.2 mg/dL এর নিচে থাকে (25 µmol/L এর নিচে)। এটি 3 mg/dL বা, 50 µmol/L এর বেশি হলে জন্ডিস বলা হয়। Jaundice শব্দটি jaunisse, থেকে এসেছে, যার অর্থ হলুদাভ।
লিভারের রোগ জন্ডিসের প্রধান কারণ। আমরা যা কিছুই খাই না কেন তা লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়। লিভার নানা কারণে রোগাক্রান্ত হতে পারে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাসগুলো লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় ভাইরাল হেপাটাইটিস। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই জন্ডিসের প্রধান কারণ এই হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলো। তবে উন্নত দেশগুলোতে অতিরিক্ত মধ্যপান জন্ডিসের একটি অন্যতম কারণ।
এ ছাড়া অটোইমিউন লিভার ডিজিজ এবং বংশগত কারণসহ আরও কিছু অপেক্ষাকৃত বিরল ধরনের লিভার রোগেও জন্ডিস হতে পারে। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়ও অনেক সময় জন্ডিস হয়। তা ছাড়া থ্যালাসিমিয়া ও হিমোগ্লোবিন ই-ডিজিজের মত যে সমস্ত রোগে রক্ত ভেঙ্গে যায় কিংবা পিত্তনালীর পাথর বা টিউমার এবং লিভার বা অন্য কোথাও ক্যান্সার হলেও জন্ডিস হতে পারে। তাই জন্ডিস মানেই লিভারের রোগ এমনটি ভাবা ঠিক নয়।